Welcome Text

Welcome you to read daily important topics, quotes, discussion or news. You can share your comments or even new topics you like to be seen by the world

শিক্ষিত হলো শিক্ষা পেল না

আচ্ছালামু আলাইকুম চাচা। কেমন আছেন? বলে আমার নিজের চেয়ারটা ঠেলে দিলাম বসতে। নিয়ম অনুযায়ী যদিও যিনি বাইরে থেকে ঘরে ঢুকছেন তারই উচিত ছালাম দেয়া; কিন্তু তিনি যেহেতু দিলেন না তাই আমি দিলাম।
কলিমদ্দিন শেখ, বাড়ির কর্তা। ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে স্বাধরণ একটা পদে চাকরী করেন। বেতন যা পান তা দিয়ে দৈনন্দিন কাঁচা পয়সার খরচ চলে যায়। মাঠে কিছু জমিজমা আছে যার ফসলে বছরের খাবারের চিন্তা করতে হয় না।
চার ছেলে, কোন মেয়ে নাই। বড় ছেলে ব্যাংকে চাকরী করেন; আলাদা থাকেন। মেজ ছেলে সংসারে থেকেও না থাকার মতো। বাড়ির প্রতিতো বটেই নিজের প্রতিও কোন দ্বায়িত্ব নাই। লেখাপড়া কোন রকমে প্রায়মারী পাশ করেছিল। এর পরে আর স্কুলের দোরগোড়ায় পা রাখে নি। কবে কোথায় থাকে বা কোথায় যায় তা সম্ভবত সে নিজেও আগে থেকে জানে না। মাঝে মাঝে যখন বাড়িতে থাকে তখন অনেক বকাবকি করে মাঠের জমি জমাগুলো দেখতে পাঠাই ওর মা। মাঝে মাঝে কলিমদ্দিন শেখ গালাগালি করে বাড়ি মাথায় তোলে কিন্তু কেন জানি না সামনাসামনি ডেকে কিছু বলে না। সংসার থেকে সে কিছু নেয়ও না সংসারে সে কিছু দেয়ও না। শোনা যায় মাঝে মাঝে কোন ট্রাকের সাথে দূরে কোথাও চলে যায়। ওখান থেকে কিছু ইনকাম হয় যা দিয়েই সে চলে।
ছোট দুই ছেলে একটা পড়ে ক্লাস নাইনে অপরটা ক্লাস সেভেনে। দুজনেই পুলিশ লাইন স্কুলের ছাত্র। ছাত্র হিসাবে খুব খারাপ না, কিন্তু একটু দুষ্টামী করে বেড়ায় বেশী। শাসনের মধ্যে রেখে পড়ালেখা দেখিয়ে দিলে রেজাল্ট খারাপ করার কথা নয়।
কলিমদ্দিন শেখ আমাকে জিজ্ঞেস করল, কি খবর কোন অসুবিধাতো হচ্ছে না?
- জ্বি না চাচা, কোন অসুবিধা হচ্ছে না।
- খাওয়া দাওয়া বা থাকায় কোন সমস্যা নাইতো?
- জ্বি না, বেশ ভালইতো আছি। জবাব দেই আর মনে মনে চিন্তা করি এতদিন পরে হঠা এত খোঁজ খবর নেয়ার কি প্রয়োজন পড়ল।
- বেশ ভাল। তা আপনার ছাত্ররা পড়াশোনা করে ঠিকমতো? নাকি শুধু দুষ্টামী করেই সময় পার করে?
- দুষ্টামী একটু করে। তবে খেয়াল রাখছি  আমি এখন। পড়ালেখার সময় দুষ্টামীর সুযোগটা আর পাচ্ছে না। আপনি চিন্তা করবেন না, আমি সার্বক্ষণিক তদারকি করছি।
- হ্যাঁ তাতো করছেন, দেখছি। কয়বার পড়তে বসে ওরা আপনার সাথে?
- সকালে, রাত্রে দুবারই আমি ওদেরকে নিয়ে বসি। ওদের দরকার অনুযায়ি যেভাবে দরকার আমার পক্ষ থেকে তার কোন ত্রুটি নাই।
- শুনলাম আপনি নাকি ঘন্টা খানেক পরেই ওদেরকে সাইড করে দিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে যান? বাড়িতে মাষ্টার রাখার উদ্দেশ্য হলো ছেলেরা যতক্ষণ পড়বে পুরোটা সময়ই তাদেরকে দেখিয়ে দেবে। তা না হলেতো বেতনের মাষ্টার দিয়েই পড়াতে পারতাম।
- জ্বি তাতো পারতেনই। তবে ওদেরকে যতটুকু দেখিয়ে দেয়ার প্রয়োজন পড়ে তাতো আমি সবটাই করছি। আমি একেবারে নেতিয়ে গেলাম তার কথা শুনে। কথাগুলোও আমার মুখ থেকে খুব দুর্বলভাবে বের হলো। তাদের পড়ানোর জন্য দেয়া আমার সময়টাকে অর্ধেক করে হিসাব করা হচ্ছে বুঝতে পারলাম। তাই দুই ঘন্টার যায়গাই এক ঘন্টা বললেন তিনি।
আমি বললাম, এক ঘন্টা নয়, দুই ঘন্টা বা তারও চাইতে বেশী সময় ধরেই আমি ওদের সাথে থাকি। এরপরে আমি আমার লেখাপড়ার দিকে একটু মনযোগ দেই ঠিকই; কিন্তু এর পরেও ওরা আমার খেয়ালের মধ্যেই থাকে এবং কোন সমস্যা হলে তখনও তা আমি দেখিয়ে দেই। আমি আমার দ্বায়িত্বশীলতা সহকারেই ওদেরকে দেখাশোনার চেষ্টা করছি।
- না, ওভাবে হবে না। আপনি ওদের পড়াশোনা শেষ হলে তবেই নিজের পড়া নিয়ে বসবেন। আপনি নিজেই যদি নিজের পড়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যান তবে ওদের দিকে আপনার কি খেয়াল থাকবে? সকালে ওদের স্কুলে যাবার আগ পর্যন্ত এবং রাত্রে দশটা পর্যন্ত আপনি ওদের সাথে থাকবেন। ওরা একা একা যদি পড়তো তবেতো আর আপনাকে এখানে কষ্ট দেবার কোন দরকারই হতো না।
- না, না আমার আর কষ্ট কি? আপনাদেরকেইতো কষ্ট দিচ্ছি। একটু হালকা রহস্য মনে থাকলেও বেশ গদগদভাবেই বলার চেষ্টা করলাম। তিনি আমার কথার প্রেক্ষিতে আর কিছু না বলেই চলে গেলেন রূম থেকে।
পরদিন বিকেলে আঃ কাদেরের সাথে মিলে কথাগুলো তাকে বলছিলাম। আমি তাকে বললাম, কথাগুলো তিনি আমাকে একা একা ডেকে বলতে পারতেন। তাতে তারই ভাল হতো।
আঃ কাদের বলল, তার আবার কি ভাল হতো? তার যা বলার তা বলে দিয়েছে এবং আপনি এখন থেকে সেটাই করবেন তিনি জানেন। কাজেই এটাই তার ফায়দা।
আঃ কাদের এবং আমি কথা বলছিলাম আঃ কাদেরের রূমে বসে। আমি বললাম, হ্যাঁ বলে দিয়েছেতো বটেই। কিন্তু এই বলে দেয়াতে এটা হয়েছে যে, আমার প্রতি তার ছেলেদের যে একটা ভক্তি বা মর্যাদা ছিল সেটা হালকা হয়ে গেল। তাদের মনে এমন একটা ভাবের উদয় হবে যে, স্যার আমাদের উপর নির্ভরশীল এবং তার অবস্থান এখানে দূর্বল। আর এর কারণে আমার কথা যদি তারা শোনেও তবুও আন্তরিকতা থাকবে না সেখানে। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে, কোন প্রায়ভেট টিচার যদি ছাত্রকে শাসন করার ফলে ছাত্রে পিতা যদি ছাত্রের সামনে টিচারকে বকা দিয়ে বলে যে, আমি আপনাকে মাসে মাসে বেতন দিয়ে রেখেছি আমার সন্তানকে শাসন করার জন্য নয়, পড়ানোর জন্য। তাতে টিচারের জন্য ছাত্রের মনে খুব বেশী হলে করুণা আসতে পারে, শ্রদ্ধা নয়। আর এতে ছাত্র প্রকৃত শিক্ষা থেকে সরে গেল এবং সবকিছুকে পয়সার সাথে তুলনা করতে শিখে গেল
- তাতে সমস্যা কি হলো?
- সমস্যা এই হলো যে, সে শিক্ষিত হলো কিন্তু শিক্ষা পেল না।
- যারা কাউকে লজিং রাখে তারাতো এভাবেই ভাবে। এতে নতুন আর এমন কি? শুধু লজিং রাখে তারাই নয়, বরং ধনীরা গরীবদের সাথে এভাবেই করে।
- না, নতুনত্বের কিছুই হয়তো নেই। কিন্তু জাতি একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে ফেলছে। আর এটা- হচ্ছে আমাদের প্রাপ্তি।
- বুঝলাম; কিন্তু ওগুলো ভেবে মন খারাপ করে কোন লাভ নেই। ভুলে যানতো সব কিছু। যেহেতু অন্য কোন উপায় সামনে নাই কাজেই চালিয়ে নিতে হবে যেভাবে হয়। সবকিছুকে এত গভীরভাবে দেখলে চলতে পারবেন না। একটু কৌশলী হয়ে কাজ করতে হবে। নিজেকেও বাঁচাতে হবে, ওদের ইচ্ছাকেও পূরণ করতে হবে।
- সেটা কিভাবে?
- কিছুই না। সবকিছুতেই সব সময় রিএ্যাক্ট করা ভুলে যেতে হবে। একটা ছোট্ট উদাহরণ দেই। আপনি কোন এক জায়গায় চাকরী করতে গেলেন। কোন এক প্রয়োজনে আপনার বস আপনাকে কিছু কাজ দিয়ে বললেন, দশ মিনিটের মধ্যে এটা করে আমাকে দেখান। আপনি জানেন এবং সবাই জানে যে কাজ দশ মিনিট নয়, এক ঘন্টাতেও শেষ হওয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে আপনি কি করবেন?
আমি কোন জবাব দিলাম না, তাকিয়ে থাকলাম আঃ কাদেরের দিকে জবাবের জন্য।
আঃ কাদের বলল, কোন কথা না বলে কাজে লেগে যান। কিছু সময় পরে বস হয়তো জিজ্ঞেস করবে কি অবস্থা। আপনার জবাব হবে, করছি স্যার; এখনো শেষ হয় নি। বস্ বলবেন, এত দেরী করলে হবে না- অত্যান্ত জরুরী। তাড়াতাড়ি করুন। আপনি বলবেন, জ্বি স্যার। কাজ করতে থাকেন। কাজ এক সময় হয়ে যাবে, সময়ও যা লাগার ছিল তাই লেগে যাবে। সমস্যা কিছুতেই হবে না।
কিন্তু প্রথমেই আপনি যদি বসের কথায় রিএ্যাক্ট করে বলতেন, এতটা কাজ মাত্র দশ মিনিটে কোনভাবেই সম্ভব নয়। আমি কেন কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। এর জন্য এক ঘন্টা সময় লাগবে। এক ঘন্টা পরে আমি করে এটা আপনার কাছে নিয়ে আসছি। ইত্যাদি যদি বলেন, তবে অবস্থাটা কঠিন হয়ে যাবে। আপনার বিরূদ্ধে কমপ্লেন হবে ইত্যাদি অনেক কিছু। আপনি এগুতে পারবেন না।
- কঠিন নয় কি ব্যাপারটা? এবং এটা কিছুটা প্রবঞ্চনার মতো হয়ে গেল না? নাদীম বলল।
- কঠিনও নয়, প্রবঞ্চণাও নয়; এটারই নাম প্রজ্ঞা। ক্ষেত্র থেকে হটাও যাবে না আবার সামনে এগিয়েও যেতে হবে। সিচ্যুয়েশন বিপক্ষে গেলে আপনিও যদি আরও দূরে চলে যান তার থেকে তো সংঘর্ষ অনিবার্য। ফল? নেগেটিভ। ফল নেগেটিভ হলেতো আপনি হেরে গেলেন। গরমের উপরে গরম নয়, ঠান্ডা দিয়ে মোকাবেলা করতে হবে।
- বুঝেছি, বাদ দেন এসব। এখন বলুন বাইরে কোথাও যাবেন, নাকি এখানে বসেই আজকের বিকেলটা কাটিয়ে দেবেন? নাদীম বলল?
- অসুবিধা নাই, চলুন। কোন্ দিকে যাবেন?
- বাইরেতো বের হবেন আগে; তারপর যাওয়া যাবে কোন এক দিকে।
রাস্তায় নামতেই আনোয়ারের সাথে দেখা। কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজে ডিগ্রী ২য় বর্ষের ছাত্র। আঃ কাদেরের সাথে বেশ ভাল মিলমিশ। আর সেই সুবাদে আমার সাথে দেখা সাক্ষাত হলে সালাম-কালাম বিনিময় হয়। আনোয়ার আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জিজ্ঞেস করলো কোন দিকে চললেন দুজনে?
- নির্দিষ্ট কোথাও না, জাস্ট একটু হেঁটে বেড়ানো আর কি। যাবা নাকি? ফ্রি থাকলে যোগ দিতে পারো আমাদের সাথে।
আনোয়ার আঃ কাদেরকে আপনি বলে সম্বোধন করলেও আঃ কাদের তাকে তুমি বলে সম্বোধন করে। আঃ কাদেরের ছাত্রের ফ্যামিলিতে আনোয়ারের যাতায়াত আছে, আর ওখান থেকে কিভাবে যেন তুমি-আপনির সম্পর্কটা চলে এসেছে। আনোয়ার বলল, বাব্বা! যোগ দিতে পারো- তার মানে বিশেষ কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এগুচ্ছেন মনে হচ্ছে।
- তা কেন?
- এই যে, যোগ দিতে পারো বলছেন তার মানেতো এরকমই হয়।
- তা যদি হয় তবে আমাদের সাথে আসলে পরে দেখতে পাবা নিজের চোখেই। হাঁটতে হাঁটতে তিনজনেই মসজিদের সামনে দিয়ে কৃষি ফার্মের ভিতর দিয়ে গ্রামের পাশে ছবির মতো গাঢ় সুবজের মাঝে হারিয়ে গেলাম।

No comments: