Welcome Text

Welcome you to read daily important topics, quotes, discussion or news. You can share your comments or even new topics you like to be seen by the world

অতি সাহসের গলায় দড়ি

কলেজের একাডেমিক ভবনের দক্ষিণ দিকের করিডোর ধরে খুব ব্যস্ততার সাথে ছুটে আসছিলাম ক্লাশে যোগ দেয়ার জন্য। কারণ দেরী হয়ে গিয়েছিল আসতে। সোহানা তার সহপাঠীনি নাবিলার সাথে গল্প করছিল কলামের সাথে হেলান দিয়ে আমি দূর থেকেই সেটা দেখেছি। কিন্তু দেখেও না দেখার ভান করে দ্রুততার সাথে চলে যেতে চাইলাম। কারণ আমার হাতে সময় নাই তার সাথে কথা বলার মতো।
তাকে ক্রস করে চলে যাবো এমন সময় সাইড থেকে তার ডাক শুনতে পেলাম, হ্যালো লাফটার। জবাব দিতেই হয়- কোন উপায় নাই। আমিও বললাম,
- হ্যালো
- যুদ্ধ কি শুরু হয়ে গেছে, নাকি শুরু হতে যাচ্ছে?
আমি অবাক হয়ে না থেমে পারলাম না তার প্রশ্ন শুনে। তার মানে? আমি প্রশ্ন করলাম।
- আপনার ছুটে চলা দেখে মনে হচ্ছে কোন এক অনাকাংখিত যুদ্ধের খবর নিয়ে যাচ্ছেন উর্ধতন কাওকে জানানোর জন্য। হাসতে হাসতে বললো সোহানা। পাশের মেয়েটিও তার কথায় হেসে দিল।
- আমি একটু লজ্জা পেয়ে বললাম, ক্লাশের দেরী হয়ে গেছেতো তাই একটু তাড়াতাড়ি যাওয়ার চেষ্টা।
- দেরী হয়ে গেছেতো ক্লাশটা বাদ দেন।
- ক্লাসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ; তাই করা দরকার।
- এতে এমন আর কি হবে? পরে কারো কাছ থেকে দেখে নেবেন তাহলেই হলো। আমার এই ক্লাশটা গ্যাপ আছে। চলুন না একটু সামনে থেকে আসি।
- সামনে কোথায়?
- কোথায়? সোহানা একটু চিন্তা করে বলল, পুকুর পাড়ের ওদিকে। আপনিতো পুকুর পাড়ে বসতে ভালবাসেন।
আমি সোহানার বান্ধবী নাবীলার দিকে তাকালাম। সোহানা তা খেয়াল করে বললো, ওহো.., স্যারি। হলো আমার বান্ধবী এবং ক্লাশমেট নাবিলা। আর নাবীলা, ইনি হলেন ... কিন্তু আর বলতে পারলো না। কারণ সে এখনো আমার নাম জানে না। একটু লজ্জা পেলেও পরক্ষণেই সামলে নিয়ে আমাকে লক্ষ্য করে বলল, তাকিয়ে কি দেখছেন? বলুন না আমার বান্ধবীকে আপনার নামটা। আপনার নাম আপনার মুখ থেকে শুনতেই সে পছন্দ করবে বেশী।
নাবীলা এবং আমি দুজনেই হেসে উঠলাম। আমি বললাম, নামটা কি শুধু আপনার বান্ধবীকেই বলবো, নাকি আপনাকেও?
- কাউকেই বলা লাগবে না। চলুন আগে ঘুরে আসি ওদিক থেকে; তারপর বলবেন। সোহানা বলল।
আমি বললাম, স্যারি টু বোথ অফ ইউ। আকর্ষণীয় প্রস্তাব। কিন্তু এখন আমাকে ক্লাশে যেতে হচ্ছে; এজন্যই এতোটা ছুটে আসছি। অন্য কোন এক সময়; অবশ্যই খুশী হবো- কোন সন্দেহ নাই? নেভার মাইন্ড। বলে চলতে শুরু করলাম।
আপনার খুশী আর আসবে না এটা জেনেই ক্লাসে যান? ততক্ষণে আমি তাদেরকে ছেড়ে বেশ খানিকটা দূর চলে গিয়েছি; কিন্তু তবুও আমি তার কথা শুনতে পেলাম। আমি পিছন ফিরে বললাম, I am extremely sorry. দেখলাম তার মুখটা ভার হয়ে গেছে।
এব্যাপারে বেশ পরে একদিন কথা প্রসঙ্গে নাবীলা বলেছিল, সেদিন সোহানাকে আমার কথায় আপসেট হতে দেখে তাকে জিজ্ঞেস করেছিল, কি ব্যাপার ভার ভার হয়ে গেলি কেন?
- কই নাতো?
- না হলেই ভাল। কিন্তু তুই ওর নাম জানিস না কেন?
- নাম জানার সুযোগ হলে না জানবো? দেখলি না কেমন করে চলে গেল?
- হ্যাঁ, তাতো দেখলাম। একটু রহস্য করে জবাব দিয়েছিল।
- চল ক্লাশে যায়।
বললো বটে, কিন্তু যাবার কোন লক্ষণই দেখা গেল না। নিঃশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইল দুজনেই। নীরবতা ভঙ্গ করে নাবীলা বলল, তুই বড্ড শক পেয়েছিস মনে হচ্ছে। কিন্তু তুই-ইতো বললি, তুই দেখতে চাস। কি দেখতে চেয়েছিলি?
- আমি দেখতে চেয়েছিলাম, একজন ছেলে তার অতি ব্যস্ত মূহুর্তেও একজন সুন্দরী মেয়ের আহ্বানে সাড়া কিভাবে না দেয়। আমার ধারণা ছিল, সে আমার আহ্বানে সাড়া না দিয়ে পারবেই না।
নাবীলা কোন জবাব দিল না, শুধু অনুচ্চ শব্দে বললো, পাগল! একটু পরে! সোহানা বলল, একটা ব্যাপার তুই আমাকে বলতে পারিস?
- কি ব্যাপার? নাবীলা জিজ্ঞেস করল।
- দ্বায়িত্বটাই বড় হওয়া উচিত, নাকি কারো আহ্বানে সাড়া দেয়া?
- অবশ্যই দ্বায়িত্ব।
- এতোটা ব্যস্ত হয়ে ছুটে আসছিল, সেতো শুধুমাত্র তার ক্লাসে যোগ দেয়ার জন্য, তাই না? আমার ডাকে সে সেটা বাদ দিয়ে ৎক্ষণাত আমার সাথে চলে যদি আসতো তবে তার উপরে কি আমার এ্যাটেনশন বৃদ্ধি পেত নাকি কমে যেতো?
- তোর হিসাব তুই জানিস, কিন্তু আমার হিসাবে সে পারফেক্ট। সে এতোটা ব্যস্ততার সাথে আসছে একমাত্র উদ্দেশ্য ক্লাশটা যেন ধরতে পারে। মাঝখানে তুই হঠা করে গল্প করার প্রস্তাব দিবি আর সে সবকিছু ছেড়ে-ছুড়ে তোর সাথে গল্প করতে বসবে এটা হওয়াইতো উচিত না। যদি হয় তবে তার প্রতি আর যার হোক আমার কোন এ্যাটেনশন থাকতো না। বিশেষ করে তুই যেখানে তার নামটা পর্যন্ত জানিস না। এমন যদি হতো যে তুই কোন বিশেষ প্রয়োজনে তাকে বলছিস, যেটা তোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তখনও যদি সে তোরটার গুরুত্ব না বুঝে বা গুরুত্ব না দিয়ে তার প্রয়োজনটাকে বড় করে দেখতো তাহলে সেটা অন্য কথা।
- তুই ঠিকই বলেছিস। আমাকে ওর সাথে দেখা করতেই হবে।
অনেক দিন পরে আমি যখন এই কথা শুনেছিলাম নাবিলার কাছ থেকে তখন খুব হেসেছিলাম; সাথে নাবিলাও। একাধিক বিষয় যখন সামনে আসে একই সাথে তখন কোনটা আগে করতে হবে বা কোনটাকে কতটা গুরুত্ব দিতে হবে তা স্থির করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু স্থির করাই না, স্থির করে সে অনুযায়ি কাজ করাই জীবনের দাবী।

একদিন পরে ক্লাস শেষে সোহানা তার বান্ধবী নাবীলা এবং অন্য কয়েকজনের সাথে কলেজ কম্পাউন্ড পার হয়ে রাস্তায় উঠতে যাবে এমন সময় তাদের এক সাইডে সাইকেল স্লো করে আমি বললাম, হ্যালো নাবীলা। ডাক শুনে দলের সবাই আমার দিকে তাকালো। সোহানা যখন আমার দিকে তাকালো তখন তাকে লক্ষ্য করে আবার হ্যালো বললাম; কিন্তু তার কাছ থেকে কোন জবাব পেলাম না। দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে চলতে লাগল- সাথে অন্যেরাও।
তখন নাবিলাকে সম্বোধন করে বললাম, নাবিলা! এক মিনিট সময় হবে?
- কেন? বলল নাবিলা।
ওদের সাথে চলতে চলতে বললাম, ‘কেনসেটা বলার জন্যইতো এক মিনিট সময় প্রার্থনা করছি জনাবের কাছে। একটু নাটকের ভঙ্গিতে বলার কারণে সবাই হেসে উঠল।
সাইড থেকে সোহানা বলল, নাবিলা বল্, সময় হবে না।
নাবিলা বলল, সময় হবে না কেন? অবশ্যই সময হবে। কিন্তু জনাব, সময়টা কি আমার কাছে দরকার নাকি অন্য কারো কাছে, সেটা প্রথম প্রশ্ন। দ্বিতীয়টা হলো ভুল সংশোধনী, আমাকে জনাব বলে সম্বোধন করা আপনার ভুল হয়েছে।
- জ্বি, আমি সময়টা আপনার কাছেই চেয়েছিলাম? আর ভুলের ব্যাপারে বলছি, আপনি নিজে থেকে শব্দের শেষে একটা ‘া’কার বসিয়ে নেন তাহলেই হয়ে যাবে। নিজের জন্য এতটুকু করার করার অভ্যাসটা এখন থেকেই তৈরী করুন।
- কিজানি। আমার নাম করে অন্য কারো কাছেও চাইতে পারেন। আর ‘া’কার বসানোর যে কথা বললেন সেটা আমার বসানো লাগবে না; যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন তিনি ‘া’কার বসিয়েই করেছেন, আপনি সেটাকে যথাস্থানে থাকতে দিলেই হবে।
- পারার কথা বললেতো অনেক কিছুই আসতে পারে জনাবা। সবকিছুকেই কি হিসাবে আনবেন?
- ঠিক আছে আনলাম না। কিন্তু মাত্র এক মিনিট? সংশোধন করে নেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
- প্রথমে এক মিনিটের অনুমতিতো মিলুক; প্রয়োজনে এক্সটেন্ড করার কথা ভাবা যাবে।
- বাব্বা! কথাতো আপনি খুব সুন্দর করে বলেন।
- ধন্যবাদ। এখন কি আমি আমার কথা বলতে পারি?
- জ্বি বলুন, কি আর করা। একটু আলাদা ঢঙে কথাগুলো বলল, যা শুনে সবাই হেসে উঠলো একমাত্র সোহানা ছাড়া।
- আপনার বান্ধবীকে একটু বলবেন প্লিজ যে, আমি তার সাথে কথা বলতে চাই?
- ভাল কথা। কিন্তু আপনি আমাকে কেন বলতে বলছেন? সরাসরি তাকেই কেন বলছেন না?
- আমার সাথে কথা বলতে আপনাকেই মানা করছে দেখছেন না? আমার সাথে যে কথা বলবে তার ভরসা পাচ্ছি না। তাই আপনাকে মিডিয়া মানছি।
দলের আর সবাই এতক্ষণ কোন কথা না বলে চুপচাপ শুনছিল। এবার সবাই একসাথে নাবিলাকে জিজ্ঞেস করে উঠল, কে রে তোর সেই বান্ধবী যার সাথে কথা বলতে তোকে মাধ্যম বানাতে চাচ্ছে?
- কে আবার? কে মানা করলো শুনলি না?
সবাই সমস্বরে বলে উঠল, সোহানা! বলেই সবাই নাবিলার দিকে তাকালো। কি নাবিলা ঠিক?
- ঠিক। বলল নাবিলা আমাকে লক্ষ্য করে, আপনি কার সাথে কথা বলতে চান?
- আমি সোহানার দিকে নির্দেশ করলাম।
ততক্ষণে আমরা কলেজ মোড়ে পৌছে গেছি। সোহানা একটি রিকসা ডেকে তাতে উঠে বসে সবাইকে বিদায় বলে রিকসাওয়ালাকে চলতে নির্দেশ দিল।
আমি বুঝলাম, অবস্থা আমার হাত থেকে চলে গেছে। আমি নাবিলাকে বললাম, মনে হচ্ছে সবকিছু গড়বড় হয়ে গেছে। ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে, বলে চলে যেতে উদ্যত হলাম, নাবিলা বলল, এখন কি করবেন?
- কি আর করবো? আমার রাস্তায় আমি চলে যাবো। বলে সোহানার রিক্সা যেদিকে গেল সেদিকে সাইকেলে চড়ে টার্ন নিলাম। পিছন থেকে একজন বলে উঠল, আপনার রাস্তায় কই, আপনিতো ওর রাস্তায়- যাচ্ছেন।
পিছন ফিরে বললাম, দুজনের রাস্তা একই দিকে।
একটু পরেই সোহানার রিক্সার সাইড হয়ে চলতে লাগলাম। রিক্সার হুড উঠানো ছিল। রিক্সাওয়ালার বয়স বেশী হওয়াই সে বেশী জোরে টানতে পারছিল না। রিক্সার সাইডে গিয়ে অনুচ্চ কণ্ঠে বললাম, আমি কালকের জন্য আপনাকে স্যারি বলতে এসেছিলাম। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আপনি বেশী রেগে গেছেন। কথা বলারই সুযোগ দিচ্ছেন না।
- স্যারি বলার জন্য সবার সামনে অমন তামাসা করার কি জরুরত ছিল?
- তামাসা বানাবার জন্যতো আমি কিছুই করি নি।
- কিছুই করেন নি? নাবিলাকে ওকথা কেন বললেন?
- কোন্ কথা?
- কি কথা বলেছেন, আপনার মনে নাই?
- মনে আছে। বলেছি, আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাই।
- আমার সাথে কথা বলতে চান তো নাবিলাকে কেন বলতে গেলেন?
- নাবিলাকে কেন বলতে গেলাম তা আপনি বোঝেন নি?
- না। বুঝেছি যে, আপনি তামাসা করার জন্য নাবিলাকে বলেছেন।
- না, তা নয়। আপনি ভুল বুঝেছেন। এভাবেতো আপনাকো বোঝানো সম্ভব নয়। প্লিজ আপনি রিক্সাওয়ালাকে থামতে বলুন। আমি বলছি।
সোহানা রেগে গেছে প্রচন্ড। ধমকের স্বরে সে বলল, এই রিক্সা, থামুনতো। রিক্সা থামলে সে বলল, বলুন কি আপনার কথা।
- বলছি, কিন্তু তার আগে রিক্সাটাতো বিদায় করুন। পরে আবার আরেকটা রিক্সায় যাবেন।
- আপনিতো আজব মানুষ! এখন আমি রিক্সা ছেড়ে দিয়ে আপনার সাথে হাঁটতে হাঁটতে যাবো? আশ্চর্য্য চিন্তা! আপনি প্লিজ যান যেদিকে যাচ্ছেন; আমাকে আমার রাস্তায় যেতে দেন। বলে রিক্সাওয়ালাকে বলল, চলুন চাচা।
আমি বুঝলাম, বেশী সাহস দেখাতে গিয়ে গড়বড় হয়ে গেছে। জানি না গড়বড় শোধরানো যাবে কি না।

No comments: