Welcome Text

Welcome you to read daily important topics, quotes, discussion or news. You can share your comments or even new topics you like to be seen by the world

বিড়ম্বনা

কলেজের ক্যান্টিনের পাশে রিকসা থামিয়ে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে সাইকেল স্ট্যান্ডকে ডানে ফেলে সামনে এগিয়ে তিন ধাপের সিঁড়ি বেয়ে বাম দিকের প্রশাসনিক বিল্ডিং-এর করিডোরে উঠতেই আমার নজরে এলো। আমি কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা তার কাছে গিয়ে ডাক দিলাম, সোহানা! ডেকেই একেবারে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
- জ্বি বলুন।
- কেমন আছেন?
- ভাল; কিন্তু কি জন্য এভাবে দৌঁড়ে আসলেন আমার দিকে হারিয়ে যাওয়া কিছু হঠা খুঁজে পাবার মতো?
- দৌঁড়ে আসলাম?
- তাইতো দেখলাম।
- ধন্যবাদ, দেখার জন্য। আর হারিয়ে যাওয়া কিছুইতো খুঁজে পেলাম।
- মানে?
- কিছু না।
- কিছু না কি? ধন্যবাদ কি জন্য সেটা বলুন আগে, তারপর খুঁজে পাবার ব্যাপারটা।
- আপনি যে আমাকে দেখেছেন সে জন্য ধন্যবাদ। সবাইতো সবাইকে দেখে না। আপনিও সবাইকে অবশ্যই দেখেন না; কিন্তু আমাকে দেখেছেন।
- কথার ফুলঝুড়ি কি আপনার ঠোটেঁর আগাই-ই থাকে সব সময়?
- সব সময় নয়, শুধু আপনি যখন আমার প্রতি সদয় থাকেন তখন।
- চাপা।
- অবশ্যই চাপা নয়। আপনি যদি ....।
- হয়েছে হয়েছে। কথা শেষ করতে দিল না, বলল- এখন বলুন কেন আমাকে ডাকলেন।
- আপনার সাথে আমি সামান্য সময়ের জন্য কথা বলতে চাই।
- আপনার সাথে আমারতো কোন কথা নাই।
- আপনার কথা না থাক; আমার কথা আছে। আর সেজন্য আপনি নন, আমি ছুটে এসেছি আপনার কাছে।
- আমার সাথে আপনার কোন কথা থাকতে পারে না।
- আপনি ঠিকই বলেছেন। আপনার সাথে আমার এমন কোন পরিচয় বা জানাশোনা নাই, যার প্রেক্ষিতে কোন কথা থাকতে পারে। মাত্র সামান্য দুই দিনের হাই হ্যালো পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। একে অপরের নাম পর্যন্ত আমরা জানি না। কিন্তু এপর্যায়েই আপনি আমাকে ভুল বুঝেছেন আমার সামান্য বেখেয়ালের কারণে। আমি আপনার নাম জানতাম না, তাই একটু ফান করার মানষিকতা থেকে অমনটি করেছিলাম। আমি আপনার ভুল ধারণাটা ভেঙে দিতে চাচ্ছি, প্লিজ।
- আপনি এখন আমার নাম বলেইতো ডাকলেন।
- সেদিন আপনার বান্ধবীরা আপনাকে এই নামে সম্বোধন করেছিল, শুনেছি এবং সেটা মনে রেখেছি।
- মনে রেখেছেন কেন?
ভ্যাবা-চ্যাকা খেয়ে তার চোখের দিকে তাকালাম। কিছুটা সামলে নিয়ে বললাম, ডাকার জন্য, আবার কিসের জন্য? নাম মনে রেখে মানুষ কি করে? পুজা নিশ্চয় করে না।
- অনেক কিছু করে- পুজাও করে। তা কেন ডাকবেন আমাকে?
- আপনিতো আর আমাকে ডাকবেন না বলে দিয়েছেন, সেজন্য। মৃদু হেসে বললাম।
সোহানা আর তার গাম্ভীর্য ধরে রাখতে পারল না আমার জবাব শুনে। তবুও তার চেহারার অন্তরাল থেকে বেরিয়ে আসা হাসিটাকে ঢেকে রাখার নিষ্ফল চেষ্টা করে বলল, আমাকে আপনি ডাকতে যাবেন কেন? ডাকার জন্যতো অন্য নাম আপনার জানা আছে।
চোখের দিকে আরও একটু গভীরভাবে তাকালাম তার। একটু পড়তে চেষ্টা করলাম তার ভিতরটা। এরপর বললাম, সে নাম কিন্তু আপনিই আমাকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, আমি নিজে গিয়ে জেনে নেই নাই।
- তো এখন নাম ধরে ডাকতে থাকুন, আমাকে কেন?
- এখনতো আপনার নাম জানি। কাজেই তাকে ডাকার আর দরকার নাই; আপনাকেই ডাকতে পারি।
- না পারেন না। যে মুখে অন্যের নাম উচ্চারিত হয় সে মুখে আমার নাম উচ্চারিত হতে দেই না।
- আপনিতো আপনার নাম কখনো আমাকে বলেন নি, তাহলে আপনার নাম ধরে ডাকবো কিভাবে? আর সেটাই আমার বিরাট অন্যায় হয়ে গেছে আমি বুঝতে পেরেছি। আর তাইতো আবার আপনার কাছে এসেছি।
- কেন এসেছেন?
- ক্ষমা চাওয়ার জন্য আপনার অনুমতি প্রার্থনা করতে।
সোহানা হেসে ফেলল, নাটক করতেতো বেশ ভালই পারেন।
- নাটক নয়, আমার মনের সরল অভিব্যাক্তি মাত্র।
- বাঃ চমৎকার।
- ধন্যবাদ।
- ধন্যবাদ দেয়ার মতো তেমন কিছু আমি বলি নি। আমার যে কোন কথাকে ধন্যবাদের দৃষ্টিতে নেয়ার অভ্যাস ছাড়ুন।
- ছাড়লাম। আর কি কি ছাড়তে হবে বলুন।
- অনেক কিছু। সর্বপ্রথম আমাকে ছাড়ুন।
- আপনাকে ছাড়ব কিভাবে? যাকে ধরতেই পারলাম না, তাকে ছাড়া যায়?
- যায়। আপনি এখন যান।
- যাব?
- হ্যাঁ।
- ক্ষমা চাওয়ার অনুমতির প্রার্থনাটা হুজুরের দফতরে ছিল অনুমোদনের অপেক্ষায়। যদি মেহেরবানি করে... আমি নাটকের ভঙ্গিতে অত্যন্ত নরম কণ্ঠে বললাম। সোহানা হেসে দিল আমার অভিনয়ে। হেসে বলল, আপনিতো দেখছি অভিনয়ও পারেন।
- অভিনয় নয় ম্যাডাম; এটা আমার সরল প্রার্থনা।
- ঠিক আছে; আপনার প্রার্থনা মঞ্জুর করা হলো। আমার থার্ড পিরিয়ড আজ অফ। সময় আপনার ক্লাস যদি আপনি অফ দিতে পারেন তো সামনে ক্ষমা চাওয়ার জন্য অনুমতি দেয়া হলো। গলায় কৃত্রিম গাম্ভির্য রেখে কথাগুলো বলে অদূরে বয়েজ কমন রূমের পাশে পুকুর পাড়ের দিকে নির্দেশ করলো।
- আজ শুধু ঐটা নয়, প্রয়োজনে সবগুলো ক্লাস অফ দিতে রাজি আছি যদি আপনি বলেন।
- বাঃ এতো উদার! দেখা যাবে। বলে সোহানা চলে গেল মেয়েদের কমন রূমের দিকে। আমিও চলে এলাম আমার ক্লাশ রূমে। আমি এলাম শুন্যে ভাসতে ভাসতে। আমার পা যে মাটি স্পর্শ করেছে তার কোন অনুভূতি আমার নাই। জীবনে কোন মেয়ের সাথে কলেজের পুকুরপাড়ে বসে কথা বলা! এটাতো আমার জন্য আকাশ ছোয়ার মতো। কিন্তু আজ তাই সত্যি হতে যাচ্ছে। কি অভিনব ব্যাপার!
ক্লাসে ঢুকে আসনে বসার আগেই সংগঠনের ক্লাস সভাপতি নাসির উদ্দিন এক জরুরী খবর দিল। খবরটা শুনেই আমার বাক রুদ্ধ হয়ে এলো- হৃদয়ের স্পন্দন বন্ধ হয়ে এলো। কেমন বিড়ম্বনা! মিছিলটা কি এক ক্লাস আগে বা এক ক্লাস পরে হতে পারতো না? আজ না হলেই বা ক্ষতি কি? দিনেরতো আজই শেষ নয়। কালও হতে পারে। কিন্তু এই মিসিলের সময় এবং সোহানার সাথে যোগাযোগের সময়টা একই হয়ে গেল?
আমি বললাম, সময় আমার একটা জরুরী কাজ আছে। আজ আমি মিসিলে থাকতে পারবো না।
- থাকতে পারবি না মানে? কোন কাজ-টাজ নাই। কেন্দ্রের প্রোগ্রাম, সর্বোচ্চ উপস্থিতি দেখাতে হবে। থাকবো না বললে চলবে না।
- বললামতো আমার জরুরী কাজ আছে।
- জরুরী কাজ-টাজ পরে; আগে মিসিল। মিসিলের সময় কোন জরুরী কাজ নাই। থার্ড ক্লাসের ঘন্টা পড়ার সাথে সাথেই কমনরূমের সামনে হাজির দেখতে চাই। ওখান থেকেই মিসিল শুরু হবে। কি ঠিক আছে?
- না ঠিক নাই।
নাসির রেগে গেল। মারমুখী হয়ে এগিয়ে এসে বলল, ঠিক নাই মানে? কি ঠিক নাই রে, কি ঠিক নাই? বল্ আরেকবার কি ঠিক নাই। সোজা কথা বুঝে আসে না?
- সোজা কথা তোর বুঝে আসে না? আমি থাকতে পারবো না, যা। বলে নাসিরকে পাশ কাটিয়ে সীটে গিয়ে বসলাম।
নাসির আমাকে লক্ষ্য করে বলল, মেস থেকে চলে গিয়ে তোর পাখা গজিয়েছে মনে হচ্ছে। সবুর কর্, আমি যদি আসিক ভাইয়ের কাছে বিচার না দিয়েছি।
- বক-বক করিস না; বিচার দিবিতো দিস, যা। এখানে লেখাপড়া করতে এসেছি, তোর বা তোর আসিক ভাইয়ের রাজনীতি করতে আসি নি। যার যা করতে ভাল লাগে তাকে তা করতে দে। তোর রাজনীতি করতে ভাল লাগে তুই রাজনীতি কর্- কে মানা করছে? আমার তা করার কোন আগ্রহ নাই, আমাকে কেন জোর করবি?
নীরবতা ভেঙ্গে ক্লাসের মধ্যে একটা গুঞ্জণ উঠলো, ঠিকইতো। এতক্ষণ দুজনের বাক-বিতন্ডায় পুরা ক্লাস চুপ হয়ে ৎসুক হয়ে দেখছিল। গুঞ্জণ শেষ না হতেই ক্লাসে টিচার প্রবেশ করলেন এবং সাথে সাথেই সবাই চুপ হয়ে উঠে দাঁড়াল।
যে ৎফুল্ল মন নিয়ে আজ ক্লাসে ঢুকেছিলাম সেটা নষ্ট হয়ে গেছে নাসিরের কথাবার্তায়। কি এক অভূতপূর্ব ভাললাগা সারা দেহমনকে আবিষ্ট করে দিয়েছিল সোহানার কাছ থেকে প্রোমিস পাবার পরে। সোহানার সাথে কথা হবার পর থেকে ক্লাসে আসার পূর্ব পর্যন্ত যেন এক ঘোরের ভিতরে ছিলাম, যার পরিচয় ফেলে আসা দিনগুলোতে কোনদিন পাই নি। জানা ছিল না এর নাম কি, তবে এর যে মাধুর্য উদ্বেল করে তুলেছিল আমার হৃদয়কে তা তুলনা করার মতো নয় কোন কিছুর সাথে।
ক্লাসে টিচার আসার পরে চেষ্টা করছিলাম টিচারের লেকচারের দিকে মনযোগ দিতে। কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছিল না। দুইদিকের চাপে বুঝতে পারছিলাম না আমি কোথায়। নাসিরের কথাবার্তায় মানষিকতা যে অবস্থায় গিয়ে পৌছেছিল সেখানে ভালোলাগার উষ্ণ আবেশের বারংবার ধাক্কায় আমি যেন ক্লাসে ছিলাম না। পাশের ছাত্রের সজোর ধাক্কায় সম্বিত ফিরে আসতেই দেখলাম ক্লাশের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। টিচার আমার নাম ধরে একাধিকবার প্রশ্ন করার পরেও যখন আমার কাছ থেকে কোন সাড়া মেলে নি তখন সবার দৃষ্টি আমার দিকে নিবদ্ধ হয়েছে।
টিচার প্রশ্ন করলেন, কোথায় তুমি এখন?
- স্যারি স্যার! আমি একটু অন্যমনষ্ক হয়ে গিয়েছিলাম।
- কোথায় গিয়েছিলে অন্যমনষ্ক হয়ে?
- স্যারি স্যার! আপনার প্রশ্নটা কি আরেকবার রিপিট করবেন প্লিজ?
- রিপিট করে আর কি হবে? তুমিতো আমার আলোচনা শোনই নি। বসো। বি এ্যাটেনটিভ।
দ্বিতীয় ক্লাসটা শেষ হতে মনে হচ্ছে অনেক বেশী দেরী হচ্ছে। একেকটা ক্লাসের সময় কি এত দীর্ঘ? এর আগেতো কোনদিন মনে হয় নি। অনেক পরে যখন ঘন্টার আওয়াজ কানে এলো তার পরেও যখন স্যার ক্লাস থেকে যাচ্ছেন না তখন যেন আর সহ্য হচ্ছে না। এমন অবস্থাতেই আমার মনে হলো একটু দেরীর কারণে যদি এখন এমন অসহ্য লাগে তবে সেদিন কেন তার অফারকে উপেক্ষা করেছিলাম; কিভাবে তা পেরেছিলাম? মনে হলো, হয়তোবা কারণ এটা ছিল যে, তখন এর জন্য প্রস্তুত ছিলাম না এবং এর কোন আশাও ছিল না এতোটা দৃঢ়ভাবে, যা আজ রয়েছে সোহানার সম্মতির ফলে।
টিচার ক্লাস থেকে বের হবার সাথে সাথেই রূম থেকে বের হয়ে গেলাম তড়ি গতিতে। তিন মিনিটের উপরে দেরী করেছেন স্যার ঘন্টার পড়ার পরেও- ঘড়ি দেখলাম।
সীঁড়ি দিয়ে নেমে গ্রাউন্ড ফ্লোরে পা দিতেই দেখলাম সোহানা তার ক্লাস মেটদের সাথে রূম থেকে বের হয়ে করিডোর দিয়ে হেঁটে আসছে। বুকের ভিতর কেমন যেন এক কম্পন অনুভব করলাম। দাঁড়িয়ে গেলাম একটু সাইড হয়ে সোহানার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। সোহানার ক্লাস মেটদের মধ্যে যারা সেদিন রাস্তায় আমাকে দেখেছে তারা একে অপরের দিকে চেয়ে হাসতে লাগল। সোহানা  কোন কথা না বলে বা না দাঁড়িয়ে সবার সাথে আমাকে অতিক্রম করে চলে গেল। বুঝলাম সবার সামনে সে আমার সাথে কথা বলবে না। অল্প সময় পর আমি তাকে অনুসরণ করলাম।
কমন রূমের সামনে অনেক ছাত্র-ছাত্রীর সমাবেশ- মিসিলের প্রস্তুতি চলছে। হয়তো এখনই শুরু হবে পূর্ব নির্ধারিত সেই মিসিল যা থেকে সে দূরে থাকতে চাচ্ছে। নির্ধারিত জায়গায় যেতে হলে এই সমাবেশকে পার হতেই হবে। কি করা উচিত একটু ভেবে নিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ালাম। সমাবেশকে সাইড করে সাইকেল স্যান্ডের কোল ঘেসে সামনের দিকে চলে গেলাম। যাওয়ার সময় কয়েকজন দেখে ডাক দিল তাদের সাথে যোগ দেয়ার জন্য। আমি তাদেরকে হাতের ইশারায় বিদায় বলে সামনে এগিয়ে পুকুর পাড়ের শিশু গাছের নীচে কমন রূমের সাইডে গেলাম।
গাছের নীচে দাঁড়িয়ে ভাবলাম, কেন এই বিড়ম্বনা? মিসিলে যোগ দেয়ার জন্য আমিতো কারো সাথে কমিটেড নই। তাহলে কেন বার বার এই বিড়ম্বনার শিকার আমাকে হতে হবে। আমার মতো আরো শত ছাত্র এই মিসিলে যোগ দিলে মিসিলের কলেবর বড় হবে। দলের পক্ষে ভাল প্রভাব পড়বে, নেতৃবৃন্দ আরও ৎসাহিত হবে। বাহবা পাবে উপর লেবেল থেকে- হয়তো বা তারও বেশী কিছু। কিন্তু আমার মতো শত সাধারণ ছাত্রের প্রাপ্তি কি? আমাদের মতো সবার সাথে তাদের কি কমিটমেন্ট, যা তারা পূরণ করছে বা করবে?
মিসিল শুরু হয়ে প্রশাসনিক ভবনের দিকে চলে গেছে বেশ আগেই। আবার ফিরে এলো সেদিক থেকে। কমন রূমের সামনে দিয়ে চলে গেল একাডেমিক ভবনের দিকে। আমি অপেক্ষা করছি আর ভাবছি, আসবেতো? মহিলা কমন রূমের সামনের করিডোরের দিকে আমার দৃষ্টি, যদি দেখা যায়। অনেকক্ষণ পরে করিডোর দিয়ে হেঁটে আসতে দেখলাম সোহানাকে। ইতোমধ্যে মিসিল একাডেমিক ভবনে রাউন্ড শেষ করে আবার প্রশাসনিক ভবনের উদ্দেশ্যে আসছে। কিন্তু এবার মিসিল সোজাসুজি প্রশাসিনিক ভবনে না গিয়ে সামনের ফাকা জায়গা দিয়ে ভবনের শেষ মাথার দিকে গেল; অর্থা বিপরীত দিক থেকে এন্টার করবে।
সোহানাকে করিডোরে দেখেছিলাম। কিন্তু তার পরেই মিসিলের বিপরীতে পড়ে যাবার ফলে আর দেখতে পাই নি। ফিরে গেল নাকি মিসিল দেখে? কিন্তু না, মিসিল চলে যেতেই আবার তাকে দেখা গেল করিডোরে ধীরে ধীরে নীচে নেমে এলো। আমি ওর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি কোন নড়ন চড়ন ছাড়া। বুকের ভিতরে কেমন যেন এক মোচড় দেয়া অনুভূতির উপস্থিতি টের পেলাম- কেমন যেন; বলতে পারবো না। ভাল লাগার শিহরণ সারা রোমকুপে ছড়িয়ে গেছে।
সোহানা কোন দিকে না তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সোজা আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল, স্যারি! দেরী হয়ে গেল।
কোন জবাব আমার মুখ দিয়ে বের হলো না; তাকিয়ে রইলাম এক দৃষ্টিতে। তা লক্ষ্য করে সোহানা বলল, কি ব্যাপার? ক্লাস অফ দিতে হলো বলে মন খারাপ নাকি?
- অবশ্যই নয়; বরং সেজন্য মন আরও ভাল। মৃদু হেসে জবাব দিলাম।
- কেন?
- ভাবতে ভাল লাগছে যে, কেউ একজন আমার আছে যার জন্য আমি ক্লাশ অফ দিতে পেরেছি। ক্লাশ অফ দেয়ার অনুমতি দিয়েছেন সেজন্য মন ভাল।
- জ্বি না স্যার। আপনি অনুমতি পেয়েছেন শুধুমাত্র ক্ষমা চাওয়ার জন্য- ক্লাশ অফ দেয়ার জন্য নয়।
- জ্বি, কিন্তু ক্ষমা চাওয়ার অনুমতি মানেইতো ক্লাস অফ দেয়ার মওকা।
- সেটা আপনি জানেন। ক্লাস অফ করে আসবেন, অথবা অন করে আসবেন সেটা আমার কোন ব্যাপার নয়। আপনি ক্ষমা চাইবেন, এটাই হলো বড় কথা। কিন্তু কই, ক্ষমাতো চাচ্ছেন না?
কোন জবাব না দিয়ে তার চোখের দিকে তাকিয়ে ধীর স্থীরভাবে প্রশ্ন করলাম, আপনি এত স্মার্ট কিভাবে?
- মানে?
- কিছু না। বসবেন নাকি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই কথা বলবেন?
- বসবো কোথায়?
- কেন, এই ঘাসের উপর- সবুজ মখমলের গালিচা। দেশের প্রেসিডেন্ট-প্রধান মন্ত্রিকে লাল গালিচা সম্বর্ধনা দেয়া হয় অন্য দেশে সফরে গেলে; আর এই পুকুড় পাড় আপনাকে সবুজ গালিচা সম্বর্ধনার আয়োজন করেছে।
- সেটা আমার সৌভাগ্য। কিন্তু আপনি কিসের আয়োজন করেছেন আমার জন্য?
- আপনার জন্য আমার কি আয়োজন সেটা এখন বলা যাবে না। তার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে।
- তাই নাকি? সাসপেনশন মনে হচ্ছে। বলে সোহানা তার খাতা খুলে দুটো পাতা ছিড়ে দুই জায়গায় রেখে বলল, বসুন। দুজন প্রায় একসাথে কাগজের উপর বসে পড়লাম। বসতে বসতে সোহানা তার কথা কন্টিউনিউ করলো, কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে?
- এখনো নিশ্চিত নই; তবে আশা করি বেশী দিন নয়।
- ওকে, অপেক্ষায় থাকলাম।
এমন সময় মিসিলটি প্রশাসনিক ভবন ঘুরে যেখান থেকে শুরু হয়েছিল সেখানে চলে এলো। বক্তব্য শুরু হলো। নিস্তব্ধতা ভেঙে গেল। কনসেনট্রেশন স্তিমিত হয়ে গেল।
- এমন একটা সময়ে আমাদের একসাথে বসার সুযোগ হলো যেটাকে মনে হচ্ছে ঝঞ্ঝা বিক্ষুদ্ধ। আমি বললাম।
- এটা আর এমন নতুন কি? সবদিনেরই চিত্রতো প্রায় একই।
- কিন্তু এতদিন তা অনুভবে আসে নি আজ যেভাবে আসছে।
- আজ কেন অনুভবে আসছে?
- শুরু থেকেই বিড়ম্বনা হয়ে সামনে আসছে। আপনি যে এতটা দেরী করে আসলেন এর কারণতো এই-ই।
- কিন্তু শেষ পর্যন্ততো এসেছি। আর দেরীর জন্য স্যারি বলেছি প্রথমেই। কাজেই সেই অভিযোগ এখনও পর্যন্ত থাকার কথা নয়।
- স্যারি বলার দরকার নাই। আপনাকে আমি কোন অভিযোগও করছি না। আমি ঝঞ্ঝা বিক্ষুদ্ধ পরিবেশের কথা বলছি।
- দ্যাটস নাইস। আমি হয়তো পরে ভুলে যেতে পারি। আপনার নিশ্চয় একটা নাম আছে; আছে না?
হেসে বললাম,
- কি মনে হয়?
- কিচ্ছু মনে হয় না। আপনার নাম কি আগে বলুন। আমার নামতো আপনি অলরেডি জেনেই গিয়েছেন। তবুও আমার মুখ থেকে শুনুন আরেকবার। আমার নাম হলো সোহানা আক্তার। এবার আপনারটা বলুন।
- জ্বি! আপনার নাম না জানার ফলেই সেদিন আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে নাবিলাকে হ্যালো বলতে হয়েছিল। যার প্রেক্ষিতে আপনি আমার সাথে কথা...
- সব কথা পরে। আগে আপনার নাম, ব্যাস। সোহানা তার কথা শেষ করতে না দিয়ে বলল।
- নাহীদ ওয়াক্কাস হাসান  আমার নাম।
- সুন্দর নাম। কিন্তু আপনি সব সময় লুকিয়ে রাখেন কেন আপনার নাম?
- ধন্যবাদ। লুকিয়ে রাখি মানে?
- লুকিয়েইতো রাখেন। তা নাহলে এতদিন হলো আপনার সাথে দেখা আজ পর্যন্ত আপনার নামটা আমাকে জানালেন না।
- এখনতো জানলেন? আর এখন জানার সাথে সাথে জানার আগ্রহটারও সমাপ্তি ঘটল। আমার নাম বলার মতো করে আলাপ আপনার সাথে হলো কবে যে আমার নাম বলবো?
- বুঝলাম। এখন বলুন আমাকে ডেকেছেন কেন।
- ডেকেছি কেন? কঠিন প্রশ্ন। আপনি বলুনতো কেন আপনাকে ডেকেছি। কিন্তু তার আগে বলুন, আপনি নাটকের ডায়ালগ বলার মতো করে কথা বলছেন কেন?
- আমার ইচ্ছা। এখন বলুন কেন ডেকেছেন।
- আপনি জানেন না?
- আমি কিভাবে জানব?
- ডাকি নি তো আমি আপনাকে। আমি সোহানার চোখে সরাসরি দৃষ্টি রেখে বললাম।
- আপনি ডাকেন নি মানে? তবে কি আমি ডেকেছি?
- না, আপনি আবার কখন ডাকলেন? আমি হেসে বললাম।
- তাহলে?
- কিছুই না; আমিও ডাকি নি, আপনিও ডাকেন নি। আমি আপনার কাছ থেকে সময় চেয়েছি- আপনি সময় দিয়েছেন।
- এটা ডাকা হলো না?
- অবশ্যই না। ডাকার মিনিং অন্যরকম।
- আচ্ছা বলুন, সময় চেয়েছেন কেন? সোহানা হাসতে হাসতে বললো।
- খুব সহজভাবে দেয়া জবাবে যদি আপনার আপত্তি না থাকে তবে বলবো, আপনার কিছু সময়ের সাথে আমার কিছু সময় ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য।  কিন্তু এটা যদি আপনার মনের বিরুদ্ধে হয়ে থাকে তবুও আমি দুঃখিত নই।
- দারুন বলেছেন। মনের বিরুদ্ধে হলে আমি আসতাম না। আমি আমার মনের বিরুদ্ধে কোন কিছু করি না। চেহারায় হাসি রেখে সোহানা বললো।
- ধন্যবাদ। খুশী হলাম শুনে।
- কিন্তু এটা বলেন, মনের বিরুদ্ধে হলেও দুঃখিত নন কেন?
- বিরুদ্ধে হলেও সে বিরোধীতা ততটা তীব্র নয়।
- কিভাবে বুঝলেন?
- খুবই সহজ। বিরোধীতা যদি তীব্র হতো তাহলে আপনি আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জয়ী হয়ে আসতে পারতেন না। কাজেই একথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, আসার ব্যাপারে আমার মনের ইচ্ছাটাই প্রবল। সো, আমার দুঃখিত হবার দরকার নাই।
- হিসাবের একটা সূত্র!
- এটা কোন সূত্র নয়। এটা তাই যা আমার মন বলল। আমরা যাই করি না কেন আমাদের মনের সাই তাতে কিছু না কিছু থাকেই। আমরা যে আজ এখানে দুজন দুজনের সামনে তাতে আমাদের মনের সাই অবশ্যই রয়েছে।
সোহানা আর কোন কথা বলল না। আমিও চুপ রইলাম। কোন কথা যেন মনে আসছে না বলার মতো বা জিজ্ঞেস করার মতো। কিছুটা অস্বস্তি লাগছে। পুকুরের ভিতরে একেবারে আমাদের সামনে একটা মাছ পানি থেকে উপরে লাফ দিয়ে আবার পানির ভিতরে ডুবে গেল। সোহানা তা দেখে আনন্দে ৎফুল্ল হয়ে বলে উঠলো, কি সুন্দর মাছটা দেখেছেন?
আমি তার জবাব না দিয়ে বললাম, আপনি সাঁতার জানেন?
- অবশ্যই। আপনি জানেন না?
- জানি, কিন্তু সম্ভবতঃ আপনার মতো অত এক্সপার্ট না।
- আমি কি এক্সপার্ট?
- তাইতো মনে হয়।
- কিভাবে?
- আপনার জবাব থেকে। আমি হেসে বললাম। সোহানাও হেসে দিল। বলল, ছোট থাকতে আমিতো পুকুরেই গোসল করতাম। আব্বু বকা দিতো, কিন্তু আমি লুকিয়ে লুকিয়ে পুকুরে চলে যেতাম গোসলের সময় হলে।
- এখন পুকুরে গোসল করেন না?
- ইচ্ছা করে খুব, কিন্তু সম্ভব না।
- কেন?
- কেন আবার? খোলা পুকুরে সবার সাথে গোসল করা যায়? বলে জবাবের অপেক্ষা না করেই বললো, আরও বসবেন, নাকি উঠবেন?
- আপনার ভাল না লাগলে অবশ্যই উঠবো।
- না, সেরকম নয়। অনেক্ষণতো হলো।
- অনেকক্ষণ কোথায় হলো? মাত্রতো আসলাম আমরা এখানে। ভাল যদি লাগে তবে সময়ের চিন্তাটা না হয় নাই বা করলাম এখন।
- ভাল লাগলেই কি সময়ের চিন্তা ভুলে যেতে হয়?
- সব সময় নয়, কখনো কখনো- যখন ভুলে যাওয়া যায়। কখনো কখনো ভুলে যেতেও হয়। সবকিছু হিসাব করে করলে তার প্রকৃত আনন্দ আর থাকে না। যেমন সাঁতার কাটতে আপনার ভাল লাগে, কিন্তু হিসাব করার কারণে তা পারেন না।
- কিন্তু সাঁতারের ক্ষেত্রেতো হিসাব করতেই হবে। আমিতো আর আপনার মতো ছেলে মানুষ নই যে, ইচ্ছা হলেই সব কিছু করতে পারবো।
- ছেলে বলেন আর মেয়ে বলেন, কেউই ইচ্ছে হলেই সব কিছু করতে পারে না। যেমন, আমরা দুজনেই যেহেতু সাঁতার কাটতে ভালবাসি কাজেই আমাদের ইচ্ছা যদি করে আমি আর আপনি মিলে এখন সাঁতার কেটে এই পুকুরের ওপারে যাই- তা পারবো না, যদিও আমরা দুজনেই সাঁতার কাটতে জানি।
- ওকে, মনে রাখবো। যদিও এটা প্রাসংগিক ছিল না। আপনি মাঝে মাঝে দার্শনিকের মতো কথা বলেন।
- যখন বলতে ভাল লাগে শুধু তখন; অন্য সময় না। অন্যভাবে বলা যায়, যখন শোনার কেউ থাকে তখন।
- গুড। একটা কথা বলি?
- শিওর।
- মনে হচ্ছে এখন থেকে মাঝে মাঝেই আমাদের কথা বলার সুযোগ হবে। তখনও কি আমরা আপনি করেই বলবো দুজনকে টিচারের মতো?
- আমার তা মনে হয় না।
- তবে এখন থেকেই শব্দটা বাদ দিলে কেমন হয়?
- আপনার ভাল লাগলে আমি আপনার সাথে আছি।
- তাহলে বিদায়আপনিওয়েলকামতুমি হাসতে হাসতে বলল সোহানা। আমিও হাসতে হাসতে বললাম, ওয়েলকামতুমিও।

এই বুঝি তোমার জরুরী কাজ? আসিক ভাই কমন রূমে তোকে ডাকে। নাসিরের আওয়াজে সোহানা এবং আমি দুজনেই ফিরে তাকালাম। নাসিরকে দেখেই আমার রক্ত চলাচলের গতি বেড়ে গেল। কিন্তু নিজেকে সম্বরণ করে বললাম, গিয়ে বল আমি আসছি।
- আসছি না, এখনই আসতে বলেছে।
- বললাম না আসছি? যা গিয়ে বল।
নাসির চলে গেল। দুজনেই চুপচাপ। নীরবতা ভেঙে সোহানা বলল, আবার পরে দেখা হবে; আজ উঠি?
- স্যারি সোহানা। বিড়ম্বনা কখনো কখনো আমাদের সাথে সাথেই চলে।
- Don’t worry. Hope, we will meet again soon. Bye - বলে উঠে দাঁড়াল। চলতে উদ্যত হয়ে মৃদু হেসে বলল, ক্ষমা চাওয়ার কথা কিন্তু এখনও পুরা হলো না। বলেই চলতে শুরু করল।
- পরের বার আবার যখন মিলবো তখন। আমিও হাসতে চেষ্টা করে বললাম।

No comments: