প্রত্যেকের কাছে তার নিজের জীবন অত্যান্ত প্রিয়। শুধু প্রিয়ই নয় সুন্দরও। কেন এতো সুন্দর এই জীবন? কেন এতো সুন্দর এই পৃথিবী। কলকল ধ্বনিতে ঝর্ণাধারা বয়ে চলে বলে? মেঘমুক্ত সুভ্র আকাশে দু’পাখা মেলে বকের সারি চোখের সামনে দিয়ে সৌন্দর্যের অর্ধবৃত্ত রচনা করে উড়ে যায় বলে? নাকী নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আপন মনে খেলতে খেলতে দৃষ্টিকে মোহিত করে বলে? অবশ্যই। বিশাল সৌন্দর্যছবি আকাশের নীচে দৃষ্টি নন্দন সবুজের সমারোহ মনকে আকর্ষণ করে। এতো সুন্দরের মাঝে নিজেকেও সুন্দর করে ভাবতে ভাল লাগে। নিজেকেও ঐ সুন্দরের হিস্যাদার মনে হয়। কিন্তু সবচাইতে বড় কথা হলো, জীবনের আকর্ষণই সবচাইতে বড় সুন্দর একটি জীবনের কাছে। এই আকর্ষণই জীবণকে প্রিয় করে তোলে সর্বদা।
কিন্তু এতসব সুন্দর মনকে সুন্দর করতে পারে না যদি না মনে স্বপ্ন থাকে। যার স্বপ্ন তার কাছে যত বেশী আকর্ষণীয় তার সময় তত বেশী মোহনীয় তার কাছে। স্বপ্ন যখন হারিয়ে যায় তখন জীবনে আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না। স্বপ্নকে ঘিরেই জীবন। যার জীবনে স্বপ্ন মরে যায় তার জীবন মরুভূমি ছাড়া আর কিছু নয়।
এত আকর্ষণীয় জীবন থেকে কেউই হারিয়ে যেতে চায় না। সবাই তার জীবনকে আকড়ে ধরে থাকতে চায় যতটা সময় পারে। কিন্তু কখনো কখনো খুব কম হলেও এমন সময়ও আসে যখন মানুষ তার জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়াকেই বেশী পছন্দ করে। আমরা দেখি আমাদের চোখের সামনে এমন ঘটনা অহঃরহ ঘটে। কেন এমন ঘটে? এত সুন্দর পৃথিবী থেকে নিজ হাতে নিজেকে সরিয়ে দিতে চাওয়ার মতো এমন নিষ্ঠুর কিভাবে হতে পারে মানুষ? কখন হতে পারে?
জীবনের এই যে সৌন্দর্য্য এর মূলে রয়েছে তার স্বপ্ন। সে স্বপ্ন ছোট বা বড় এটা কোন বিচার্য বিষয় নয়। একই স্বপ্ন কারো কাছে জীবন সমান আবার অন্যের কাছে তা অতি নগন্য মনে হতে পারে। যার স্বপ্ন তার কাছেই শুধু বড়- অন্যের কাছে হয়তো বা নয়। স্বপ্ন যখন হারিয়ে যায় তখন তার আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না অনেক কিছু থাকার পরেও। স্বপ্ন হারানো জীবনে কোন আকর্ষণ থাকে না যতক্ষণ না দ্বিতীয় কোন স্বপ্ন তার বেঁচে থাকার মানে বলে দেয়। আর বলে দেয়ার আগ পর্যন্ত মানুষ যেকোন কিছুই করতে পারে। এমনই এক সন্ধিক্ষণে এসেই মানুষ তার নিজের জীবন থেকে সরে যাবার মতো রূঢ় সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে কেউ কেউ।
জীবনে অনেক কিছু চাওয়ার থাকে- থাকতে পারে। মানুষের মনে অনেক স্বপ্ন থাকতে পারে। একটি স্বপ্ন ভেঙে গেলেও সে তার জীবনকে ভালবাসে যদি তার জীবনে অন্য স্বপ্ন থাকে এবং সে স্বপ্ন তার জীবনকে আকৃষ্ট করতে পারে। হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন যদি এমন হয় যাকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকে বাকী স্বপ্ন, তবে তার হারিয়ে যাওয়াতে বাকী স্বপ্নগুলোর আর কোন আবেদন থাকে না।
স্বপ্ন কি? কিছু সুন্দর চাওয়া। অথবা চাওয়ার সুন্দর রূপ। চাওয়ার কল্পিত রূপ যা মানুষ পাওয়ার আশা করে। যা পাওয়ার জন্য মানুষ হৃদয়ে নানান ধরণের কল্পণাকে পুষে রাখে।
না, আমি এমন স্বপ্নের কথা বলছি না যা, কখনো পূরণ হবার মতো নয়। যে স্বপ্ন শুধুই স্বপ্ন আমি তার কথা বলছি না। আমি বলছি সেই স্বপ্নের কথা যে স্বপ্নগুলোকে নিয়ে জীবন আবর্তিত হয়। ছাত্রের স্বপ্ন পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করা, বেকারের স্বপ্ন একটা ভাল চাকরী কিভাবে মিলে যায়, প্রেমিকের স্বপ্ন তার প্রেমিকার সাথে পুরো জীবন কাটানোর বন্দোবস্ত হয়ে যায় ইত্যাদি। কেউ যদি এগুলোকে স্বপ্ন বলতে না চায় তাতে আমার আপত্তি নাই। কিন্তু আমি তাকে স্বপ্ন বলি। এসব স্বপ্ন আমাদের জীবনের স্বপ্ন, আমার আগামী কালের স্বপ্ন, আমাদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন।
আমি আমার জীবনের স্বপ্নের কথা বলছি। আমি বলছি আমার দৈনন্দিন স্বপ্নের কথা। আমার ভাল লাগার, আমার ভালবাসার স্বপ্নের কথা। আমি সে স্বপ্নের কথা বলছি যার বাস্তবায়নের জন্য আমরা আমাদের সময়, শ্রম মেধা এবং অর্থ ব্যয় করি আমাদের সাধ্য অনুযায়ী। আমি সে স্বপ্নের কথা বলছি যা আমাদের জীবনকে ঘিরে আবর্তিত হয়, যা আমরা দেখি নিছক বেঁচে থাকার তাগিদে। আবার আমি এ স্বপ্নের কথাও বলছি যে স্বপ্ন আমার বেঁচে থাকাকে আরও আকর্ষণিয় করতে নিয়ামক হয়। আমি এমন সব স্বপ্নের কথা বলছি যে স্বপ্ন বেঁচে থাকলে ভাল লাগে আকাশের সৌন্দর্য্য, ভাল লাগে সবুজের সমারোহ, পাখীদের গান, ঝর্ণার নিরবিচ্ছিন্ন ছুটে চলা। আমি সেই স্বপ্নের কথা বলছি যে স্বপ্ন ভেঙে গেলে পৃথিবীর এই সব অপরূপ সৌন্দর্যের কোন মানে আর অবশিষ্ট থাকে না।
আমি স্বপ্ন দেখি; আমি স্বপ্ন দেখাই। স্বপ্ন আমার জীবন, স্বপ্ন আমার চলার গতি। আমার স্বপ্ন আমার ভালবাসা, আমার ভাললাগা। এই স্বপ্নকে আমি ভেঙে দিতে পারি না। আমার জীবন থেকে আলাদা করতে পারি না আমি আমার স্বপ্ন, যা আমাকে দেয় আনন্দ-বেদনা, আশা-নিরাশার মিশ্রিত স্বাদের আস্বাদন। যে আশা পূরণ না হবার ভয় নাই তা আমার স্বপ্ন নয়। তাকে নিয়ে বেঁচে থাকা যায়, সামনে এগিয়ে যাওয়া যায় কিন্তু স্বপ্ন দেখা যায় না। স্বপ্ন বলি আমার সেই আশাকে যা পাওয়া না পাওয়ার দোলায় দোদুল্যমান। পাওয়ার সম্ভাবনা যেমন আছে, তেমন না পাওয়ার সম্ভাবনাকেও নাকচ করে দেয়া যায় না। স্বপ্ন বলি তাকে যা পাওয়ার পাশাপাশি হারানোর ভয়ও থাকে।
আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। তুমি আমার ভালবাসা, তুমি আমার স্বপ্ন। তোমাকে আমি পেতে চাই আমার হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে আমি জানি। তোমাকে আমি পেতে চাই আমার জীবনের রাণী করে তাতে কণা পরিমাণ সন্দেহ নাই। তোমাকে পেতে চাই আমার জীবনকে সুন্দর করার জন্য, তোমাকে নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য। তোমাকে নিয়ে আরও নতুন নতুন স্বপ্ন দেখার জন্য। তোমাকে পেতে আমি পাগল এজন্য যে আমি পাগল নই। কিন্তু তোমাকে না পেয়ে আমি পাগল হয়ে যেতে প্রস্তুত নই। তোমাকে নিয়ে আমি বাঁচতে চাই, কিন্তু তোমাকে না পাওয়ার যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে আমি মরতে রাজি নই। আমি তোমাকে ভালবাসি তোমার ভাললাগার জন্য নয়; বরং ভালবাসি আমার ভাল লাগার জন্য। তোমার ভালবাসার প্রতিদান দেবার জন্য আমি তোমাকে আমার জীবনের সাথে জড়াতে চাই- এমনটি নয়; বরং আমার ভালবাসার দাম দেবার জন্যই আমি তোমাকে আমার জীবনের সাথী করতে চাই। আমি প্রেমিক, কিন্তু আমি পাগল নই।
আমি আমাকে ভালবাসি বলেই তোমাকেও ভালবাসি। আমি আমার চাওয়া-পাওয়াকে ভালবাসি বলেই তোমাকে ভালবাসি। তোমাকে আমার ভালবাসতে ভাল লাগে বলেই তোমাকে আমি ভালবাসি। তোমাকে নিয়ে আমি সুখি হতে চাই বলেই তোমাকে আমি ভালবাসি। তোমার ভালবাসায় সিক্ত হয়ে আমার জীবনের পথ পাড়ি দিতে চাই বলেই তোমাকে ভালবাসি। সে বললো, জেনে হিসাব করবেন একজন মানুষ প্রতি দিন কত পরিমাণ অর্থ বেনসনের সাথে পুড়িয়ে ফেলে।
আমি আর কোন কথা বলতে পারি নি এর পরে, শুধু বিশ্বয়ে বিমুঢ় হয়ে তাকিয়ে থেকেছি তার পানে। তখন সেই আবার বলল, কিন্তু যারা পুড়াচ্ছে তাদেরকে বললে তারা আমার সাথে একমত হবে না। তারা বলবে তারা ভোগ করছে। তখন আমি চিন্তা করে বললাম, ভোগইতো বটে। একেক জনের ভোগের ধরণ একেক রকম। কেউ হয়তো এটাকে উপভোগও বলতে পারে।
একটা টিউশনি যোগাড় করার জন্য কত জনকে যে কতবার বলেছি তার হিসাব রাখা কি সমিচীন? মেলেনি যে একেবারে তা নয়। মিলেছে কখনো কখনো। বেতন? কপাল ভাল হলে দুইশ টাকা, তা না হলে একশ পঞ্চাশই সই। তার মানে কিন্তু এ নয় যে, একশ পঞ্চাশের টিউশনি পাওয়া মানে কপাল খারাপ। এরকম দুইটা টিউশনি পেলে পুরো মাসের তিনবেলা খাওয়া চলে যেতো- তাকে কিভাবে কপাল খারাপ বলা যাবে? তবে এরই মাঝে কেউ কেউ যে বেশী বেতনের টিউশনি পেতো না তা নয়। তাই যদি না পেত তবে এই দেড়শ দুইশ টাকার টিউশনি আমাদের ভাগ্যে মিলতো কিভাবে? দেড়-দুইশ’র টিউশনি করতে করতে যখন পরিচিত কেউ একটু ভাল বেতনের টিউশনি খুঁজে পেত তখন আগেরটা কাউকে না কাউকে দিয়ে দিত। একটা টিউশনির যে কত মূল্য তা কি আজ এই সূদুরে বসে রিয়্যালের হিসাব করতে শেখা মাথায় তোমাকে বোঝাতে পারবো? নাকি তুমি আদরের দুলালী আমার সেই কথা বুঝতে পারবে?
কেন বলছি তোমাকে এসব কথা? বলছি এই কারণে যে, তোমাকে মনে প্রাণে ভালবাসার পরেও, আমার থেকে তোমার দূরত্ব তৈরী হবার আশংকা সত্ত্বেও কেন আমি বিদেশে আসলাম তা যেন তুমি বুঝতে পারো? কি হবে তা দিয়ে? হয়তো বা কিছুই হবে না; হয়তো বা কিছু হবে? যেহেতু কিছু হবার সম্ভাবনা একেবারেই নাই এমন নয়, তাই তোমাকে বলছি এসব।
কুষ্টিয়া সরকারী কলেজে ভর্তি হয়ে সর্বপ্রথম যে প্রচেষ্টাটা আমাকে করতে হলো তা হলো, থাকার একটা ব্যবস্থা। কিভাবে করলাম? বলছি, শোন।
আমি এখন আমার জীবনের যে অধ্যায়টি তোমাকে শোনাতে যাচ্ছি তা বেশ আগেই লিখেছিলাম আমার নিজের জন্য। আমার কথা আমারই জন্য লিখেছিলাম যখন তুমি আমার চেতনায় আসো নি। আমার কথা আমি কেন লিখেছিলাম? লিখেছিলাম জীবনের গাঁথাগুলোর একটা অংশকে কাগজের পাতায় সন্নিবেশিত করলে কেমন লাগে তা দেখার জন্য। তখন কেউ ছিল না যাকে এগুলো শোনাতে পারি। কিন্তু আজ অন্ততঃ তুমি আছো। আছো না? অন্তত আমার মনেতো আছো? এটাই বা কম কি? তাই তোমাকে শোনাতে পারি, যদি তুমি ধৈর্য ধরে শোন।
আমার জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোর গাঁথা শোনার আগ্রহ যে তোমার হবে তা আমি নিশ্চিত করেই জানি। তুমি যদিও বাস্তবতাপ্রিয় এক তরুণী আমি জানি, তবুও তোমার মন আছে। তোমার সেই মনে আবেগ আছে, অনুভূতি আছে, আছে প্রেম। তোমাকে আমি শ্রদ্ধা করি, তুমি তোমার মনের সেই আবেগ, অনুভূতি এবং প্রেমকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারো। নিজের শাসন তাদের উপর চালাতে পারো। কিন্তু তার অর্থ অবশ্যই আমি এটা মনে করি না যে, তুমি তাদের উপর প্রয়োজনের তাগিদে শাসন চালাতে গিয়ে একটুও কষ্ট পাও না। আমার ভালবাসা যেমন আমার হৃদয়ের দুকুল প্লাবিত করে উত্তাল প্রবাহ সৃষ্টি করে অতি সহজেই, তোমারটা তেমন নয়; আমি জানি। কিন্তু তোমার ভালবাসা তোমার হৃদয় সরোবরে প্লাবন যে একেবারে আনে না এমনটি অবশ্যই আমি বিশ্বাষ করি না।
তোমার আঁচলে প্রেমের নিদর্শণ হিসাবে দেয়া প্রেমের ফুলটিকে দুটি আঙ্গুলে সযতনে ধরে আপন ঠোঁটের স্পর্শ দিতে বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতনতা তোমাকে বারণ করলেও সে ফুলের সুগন্ধ নিতে তোমার মন যে ব্যকুল হয় না এমন নয়। আঁচল থেকে তুলে তাকে ফেলে দিতে বাধ্য হলেও আপন হাতকে সন্তর্পনে একবার নাকের কাছ দিয়ে নিয়েই ফেলবা এটা অবশ্যই সত্যি। তাই আমার জীবনের লিখে রাখা অধ্যায়গুলো তোমার সামনে থেকে পঠিত না হয়ে অবশ্যই ফিরবে না।
No comments:
Post a Comment