তোমার স্পর্শে যে এত যাদু আছে তারই সন্ধান মেলে এখানে। সেদিন তোমার পরনে ছিল হালকা আকাশী রঙের শাড়ী, যা তোমার পুরো দেহটাকে সুন্দরভাবে জড়িয়ে রেখে আমার পানে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছিল আমার সাথে মজা করার মানসে। জানি না কেন তুমি সেদিন শাড়িতে নিজেকে অমন আকর্ষণীয় করে জড়িয়েছিলে। এর আগে কদাচীত তোমাকে দেখেছি শাড়িতে। আর তা দেখে তোমাকে শাড়ি পরার জন্য বলেও তোমার সাড়া পাই নি, যদিও এটা তোমার অজানা নয় যে, তোমাকে শাড়িতে দেখতে আমি খুবই পছন্দ করি।
শাড়ী জনম ধন্য হওয়ার আনন্দে গর্বীত হাসিতে সেই শাড়ি তোমাকে করে তুলেছিল অপরূপা। অন্য অনেকের মতো শাড়ি হয়ে যদিও তোমার দেহে জড়িয়ে থাকার ইচ্ছা একবারও আমার হয় নি শাড়ির ঐ গর্বিত হাসি দেখে, কিন্তু অপরূপা পুষ্পসদৃশ তোমার সৌন্দর্য্যসরাব পান করে বেহুঁশ হবার কামনা আমাকে তাড়িত করছিল তীব্রভাবে।
তুমি সুন্দর, তোমার শাড়ি সুন্দর। তোমার সুন্দর শাড়ি তোমাকে করেছে আরও বেশী সুন্দর। তোমাকে অপরূপা করেই তোমার শাড়ীর দ্বায়িত্ব এবং চাওয়া-পাওয়া শেষ। তার নিজস্ব কোন চাওয়া-পাওয়া নাই তোমার কাছে। কিন্তু আমার তেমন নয়। আমার চাওয়া-পাওয়া ওখান থেকেই শুরু, যেখানে এসে তোমাকে পেঁচিয়ে রাখা শাড়ি তার দায়িত্ব এবং চাওয়া-পাওয়ার শেষ করেছে। সব মিলিয়ে তোমার যে সৌন্দর্য তাই আমার জন্য। তোমার সৌন্দর্য বর্ধনে নিয়োজিত হওয়া আমার ইচ্ছা নয়, বরং তোমার সৌন্দর্যকে আমার করে নেয়াই আমার ইচ্ছা। তোমার সৌন্দর্য্যে আমার দেহ-মনের প্রশান্তিই আমার কাম্য। ধন্যবাদ শাড়ি তোমাকে আমার প্রিয়ার সৌন্দর্যকে পরিপূর্ণরূপে ফুটিয়ে তুলতে সহায়তা করার জন্য।
রূমে প্রবেশ করে তোমার কাছে গিয়ে বসলাম সামনা-সামনি হয়ে। তোমার চোখের দিকে তাকালাম, হাত রাখলাম তোমার দুটো হাতের উপর, যা তখন কাজে ব্যস্ত ছিল। আলতোভাবে তোমার হাত দুটো আমার হাতের মুঠোর মাঝে নিয়ে তোমার চোখের দিকে তাকালাম। না, নত নয় তোমার চেহারা; তোমার হাত ধরার শুরু থেকেই তুমি আমার দিকে চেয়ে আছো তোমার কাজ বন্ধ করে। কোন কথা নয়..., শুধু চেয়ে থাকা। সম্ভবত আমার অজান্তেই আমার হাতের বাঁধন শক্ত হচ্ছে তোমার হাতের উপর। তোমার চোখ যেন পড়তে চাচ্ছে আমার দৃষ্টিকে, আমার অনুভূতিকে, আমার অনুভবকে, যেমনভাবে আমার দৃষ্টি পড়ছে তোমাকে, তোমার চাহনীকে। পল পল করে সময় বয়ে যাচ্ছে নিঃশব্দে- কারো মুখে কোন কথা নাই। তোমার অপরূপ চোখের দৃষ্টিতে যে ভাষা লিখা আছে তা আর কিছু নয়, নিজেকে সঁপে দেয়ার।
আমার কাছে মনে হলো, তুমি বলে দিচ্ছ চোখের ভাষায় তোমার সকল কথা। তুমি যেন এমনি একটা মূহুর্তের অপেক্ষায় ছিলে অনেকক্ষণ যাবৎ।
আমি হারিয়ে ফেললাম আমার চেতনাগুলোকে তোমার চোখের তারায়। আমি ভুলে গেলাম তোমাকে কিছু বলতে, যা তোমার কানদুটো শুনতে চাচ্ছিলো তখন।
কিন্তু এমন এক বিশেষ মূহুর্তে কোন কথা যে আমার বলা উচিত সে বোধ আমার কাজ করে নি। বললাম না কিছুই। কেন বললাম না? বলতে যে হবে তাইতো বুঝতে পারি নি, বলবো কিভাবে? বুঝতে পারি নি কি বলতে হবে তাও। ভাল লাগার আবেশে এতটাই ডুবে গিয়েছি যে, যে অনুভূতি আমাকে বলে দেবে তোমাকে কিছু বলার কথা সেও অবশ হযে গিয়েছিল।
আকাশের যে চাঁদকে আমরা দূর থেকে দেখে আনন্দে আপ্লুত হই তার সৌন্দর্যের মোহনীয় আকর্ষণে, সেই চাঁদকে কেউ যদি হঠাৎ দেখে তার হাতের মুঠোই তবে হুঁশ হারাবে না কোন বেহুঁশ? যাকে আমার হৃদয় চেয়ে এসেছে তার প্রতিটা দর্শনে এবং অদর্শনে; যাকে শোনার আগে এবং পরেও শুনতে চেয়েছে বারবার; এমনকি সারাদিন দেখার পরেও দেখতে চেয়েছে যাকে আরও বেশী সময়ের জন্য, তাকে স্পর্শে পেয়ে পাগল না হওয়ার মতো পাগলতো আমি নই।
যে কথার শব্দ তরঙ্গ তোমার শ্রবণেন্দ্রীয় শুনতে চাচ্ছিল তা আমি বলতে পারি নি। যে শব্দে তোমার হৃদয়ের শব্দগুলো বেগবান হতে চাচ্ছিল তা আমি তোমাকে শোনাতে পারি নি। তোমাকে বলতে পারি নি আমি যে, আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমি বলতে পারি নি তোমাকে যে, তোমাকে ছোঁয়ার এই মধুময় অনুভূতি আমি ধারণ করে থাকবো যতদিন আমি তোমার থেকে দূরে থাকবো। আমি বলতে পারি নি তোমার এই অবশ করে দেয়া আবেশকে আমি আমার সমস্ত রক্তপ্রবাহে ধরে রাখবো। আমি বলতে পারি নি স্বপ্নের চাইতেও আমার আজকের পাওয়া বেশী মোহনীয়। না, আমি বলি নি কিছুই শুধু অনুভবে ভারি হয়ে যাওয়া দুচোখের আবেগময়ী দৃষ্টিতে তোমাকে দেখা ছাড়া।
শেষে কথা বললে তুমিই। সে কথা কোন আবেগের কথা নয়; অভিযোগের কথা।
হালকা ঝাঁঝের সাথে তুমি বলে উঠলে- হাত ছাড়ুন, কাজ করছি দেখেন না?
যেন তুমি তোমার ঝাঁঝের মাধ্যমে একথাই আমাকে বলে দিলে যে, এমন এক মূহুর্তেও যখন সুন্দর কথার প্রকাশ দিয়ে আমাকে আপনার দিকে আহ্বান করতে পারলেন না তবে কেন শুধু শুধু হাত ধরে রাখা- ছেড়ে দিন আমাকে আমার মতো। ছেড়ে দিতে তুমি বললে ঠিকই, কিন্তু আমার হাত থেকে তোমার হাতকে ছাড়িয়ে নেয়ার কোন প্রয়াস তোমার মধ্যে দেখলাম না।
No comments:
Post a Comment