কত বোকা আমি! ছেড়ে দিলাম তোমার হাত।
হায়! তখন যদি আমার বোধ এতটুকু কাজ করতো যে, তোমার এই না-এর মাঝেই হ্যাঁ লুকিয়ে আছে। তখন যদি বুঝতাম তোমার চাওয়াকে আমার মুখের ভাষায় শুনতে চাও বলেই তোমার ঐ ‘না’-এর প্রকাশ। ধরা দিতে তোমরা চাও না কখনোই নিজে থেকে, ধরতে হয় আমাদেরকেই- এই সহজ তত্ত্বটাও আমি জানি না। কেন জানি না? জানার সুযোগ হয়নি? কিজানি..., হয়তো বা না।
তোমার হাত ছেড়ে দিয়ে আমি বললাম, আমি তোমাকে হেল্প করি?
আমি কিভাবে জানবো তোমার শ্রবনেন্দ্রিয় তখন হেল্প করার কথা নয়, অন্য কথা শুনতে চাচ্ছিল, যা আমি বলতে পারি নি। আগের সেই ঝাঁঝ কণ্ঠে রেখেই বললে, লাগবে না আপনার হেল্প- আমিই পারি যা করতে হবে।
- তুমি যে পারো সেটা শুধু তুমি নও, আর সবাইও জানে। সেই কারণেই তোমাকে এখানে সুযোগ দেয়া হয়েছে।
- সুযোগ! তুমি অবাক হবার ভান করে বললে।
- অবশ্যই সুযোগ। আমার লাগেজ গুছিয়ে দেয়ার দ্বায়িত্ব পাওয়াটা তোমার জন্য অবশ্যই সুযোগের ব্যাপার- সেটা তুমি জানো।
- শোকর করেন, খালাম্মা বলেছেন এটা করতে। তা না হলে দেখতাম কেমন বুড়ির পুটুলি বানিয়ে নিয়ে যেতেন জিনিস-পত্র। পরে যেয়ে যখন যেটা দরকার হতো তার কোনটাই ঠিকমতো পেতেন না প্রয়োজনের সময়।
- সেটা আমি জানি। শোকর খালাম্মার শুধু নয়; তোমারই করছি বেশী করে। তাছাড়া খালাম্মার শোকর তুমিও করো যে, তুমি যা চাচ্ছিলে তা করার সুযোগ তিনি করে দিয়েছেন।
- আমি চাচ্ছিলাম মানে? আমার বয়েই গেছে। খালাম্মার কথা না শুনে পারি না, তাই।
- আমি জানি বয়ে গেছে কি না।
একটা দম নিয়ে বললাম, তোমাকে যে আমার দরকার সেটা কি আমি কোন সময়ই অস্বীকার করেছি? সেটা স্বীকার করার সুযোগ পেতেইতো আকুল থাকি সব সময়। শুধু আমার লাগেজ নয়, আমার জীবনের সমস্ত এলো-মেলো অধ্যায়গুলোকে পরিপাটি করে গুছিয়ে দেয়ার জন্য তোমাকে আমার খুব দরকার; তুমি তা খুব ভাল করেই জানো। দরকার আমার স্বপ্নগুলোকে সত্যি করার জন্য; আমার জীবনকে আরও সুন্দর করার জন্য। এই মরুবুক সুমিষ্ট পানীয় জলে প্লাবিত করে সেখানে অবগাহনের জন্য তোমাকে আমার খুবই দরকার।
তোমার চোখের দিকে তীব্র দৃষ্টি মেলে প্রশ্ন করলাম, থাকবে বলো আমার সাথে সাথে?
তার কোন জবাব তুমি দিলে না। শুধু বললে, জানি না। আপনি যানতো এখন- কাজের সময় ডিস্টার্ব করবেন না।
- কাজের সময় ছাড়া ডিস্টার্ব করার ভাল সময় আর কখনও পাবো? কাল থেকে তো অনেক দিন পর্যন্ত আর ডিস্টার্ব করতে আসবো না তুমি চাইলেও। আর তখন আমার ডিস্টার্বের কথাই তোমার বার বার মনে পড়বে সুখের অনুভূতি হয়ে, আমি জানি।
- হ্যাঁ, আপনিতো সবজান্তা শমসের; আর কি কি জানেন শুনি? তুমি প্রশ্ন করলে।
- অনেক কিছু জানি। সুখ অথবা দুঃখ যে অনুভূতিই আসুক না কেন তুমি তা আমাকে কখনো জানাবা না, তাও আমি জানি। আমি বললাম। আমি জানি, তোমার ভাললাগার কথাগুলো কখনোই আমার সামনে প্রকাশ করবা না, লুকিয়ে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করবা। তোমাকে ভাললাগার কথাগুলো আমার মুখ থেকে শুনতে যে তোমার ভাল লাগে সেটাও তুমি কখনো আমাকে বলবা না, সেটাও আমি জানি।
- আর?
- আমি জানি আরও অনেক কিছু, যার অনেক কিছু তুমিও জান; কিন্তু তুমি তা উচ্চারণ করবা না আমার সামনে আবার স্বীকারও করবা না।
- তুমি আমার জীবনের এক নীরব উপন্যাস, যে কখনো বলতে পারে না নিজের কথাগুলো, কিন্তু লেখা থাকে সবটাই তার পাতায় পাতায়; পড়ে জানতে হয়। আবার এ এক অভিনব হৃদয়োপন্যাসও বটে, যা আবেগের অধ্যায়গুলোকে লুকিয়ে রাখে অতি সংগোপনে, জানতে দিতে চায় না। পাগল হওয়া আপন অনুভূতিগুলোকে অন্য কোন কালির আঁচড়ে ঢেকে রাখার অপপ্রয়াস যার মধ্যে সর্বদা। এ যেন সাদা কাগজের উপরের লেখা ভালবাসার কথাগুলোকে সবার দৃষ্টির আড়াল করতে ইরেজার দিয়ে মুছে ফেলার অহেতুক প্রচেষ্টা যাতে দৃশ্যমান চিহ্ন রয়েই যায়।
তুমি অপলকে কিছুক্ষণ আমার পানে তাকিয়ে থেকে বললে, আপনি অনেক সময় খুব সুন্দর করে কথা বলেন।
- শুধু তখন, যখন তুমি আগ্রহ নিয়ে শোন আর কথাগুলো হয় তোমাকে আর আমাকে নিয়ে।
- সব সময়ইতো আমি আপনার কথা আগ্রহ নিয়ে শুনি- কবে আবার না শুনলাম?
- তাহলে আমি যা শুনতে চাই তোমার থেকে, তা কেন বলনা কখনো?
- কথা শোনা আর বলা এক কথা নয়। আমি শুধু শোনার কথা বলেছি, বলার কথা নয়।
- কেন? বলতে বাঁধা কোথায়?
- আপনিইতো বলেন সব সময়, আমাকে বলার সুযোগ কখন দেন?
- মস্ত বড় অভিযোগ! ঠিক আছে, এখন তুমি বলো। এখন শুধু তুমি বলবে আর আমি শুনবো।
আমি তাকিয়ে রইলাম তোমার পানে, কিন্তু তোমার থেকে কোন কথা বের হবার লক্ষণ নাই। আমি বললাম, আর কত অপেক্ষা?
- কে বলেছে অপেক্ষা করতে?
- তার মানে বোম মারলেও কিছু বের হবার নয়। আমি আগেই জানতাম।
- তাহলে শুধু শুধু আমার উপর দোষারোপ করাটা ঠিক হলো? আমি জিজ্ঞেস করলাম তোমাকে।
- দোষারোপ করি নাই, প্রশংসা করেছি।
- এটা বুঝি প্রশংসা হলো?
- আমার প্রসংসা এমনই।
No comments:
Post a Comment