ভাবনার এক অতল গভীরে হারিয়ে গেলাম স্থান-কাল ভুলে। কত সুন্দর এই পৃথিবী, কত সুন্দর এই সৃষ্টি জগত। কতই না সুন্দর এই মানব সৃষ্টি যা একে অপরকে কত ভাবেই না আকর্ষণ করে। কেউ বাঁচে শুধুই নিজের জন্য, কেউ বা বাঁচে (আপাতঃ দৃষ্টিতে) অপরের জন্য। প্রত্যেকেরই একটা না একটা আকর্ষণ রয়েছে বেঁচে থাকার পিছনে। আমার আকর্ষণ ... ! আমার আকর্ষণ কি? আমার আকর্ষণ আমি নিজে, নাকি তুমি? নাকি এ দুয়ের কেউই নয়?
তুমি আমাকে হাসাও আবার কাঁদাও-তা আমি জানি। কিন্তু তুমিই কি আমার বাঁচার অনুপ্রেরণা? আমি জানি না। নিছক নিজের জন্য বাঁচার চাইতে কেউ যদি এমন থাকে যে হয় অনুপ্রেরণা বেঁচে থাকার, তবে তাতে সুখ বেশী। তাতে পাওয়ার অনুভূতিটা সর্বদাই বেশী থাকে। যে পাওয়ার সাথে হারানোর ভয় থাকে সে পাওয়াই সবচাইতে বেশী মোহনীয়।
কিছুক্ষণ পরে যখন আমিও চলে গেলাম একই রূমে, তুমি স্মিত হাস্যে আমাকে অভিবাদন জানালে। তোমার এই অভিবাদন আজ নতুন নয়- অনেকবারই পেয়েছি, কিন্তু তোমার মুখের ভাষায় নয়। যা পেয়েছি তা তোমার চেহারায়। আর তা থেকেই আমি বুঝেছি যে, শুধু তুমিই যে আমাকে তোমার পানে আকর্ষণ করো তা নয়; বরং তুমিও আমার হৃদয়ের আহ্বানে সাড়া দিতে ভালবাসো। আর সেটাই আমাকে সহজ করে দেয় তোমার পথে এগিয়ে যেতে, তোমাকে নিয়ে ভাবতে, তোমাকে স্বপ্ন দেখতে এবং তোমাকে ধারন করে রাখতে মনের মাঝে।
একটি বীজ মাটিতে বপন করার পর পৃথিবীর আলো বাতাস দেখার জন্য সামনের প্রতিটা মূহুর্ত তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাটির নীচের একটু উষ্ণতা তার জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ পরিমিত সিক্ততাও। পরিমিত পরিমাণের হেরফের হলে তার অঙ্কুরোদগম হতে পারে না; সামনের পৃথিবীর আলো দেখতে পারে না। তোমার প্রতি আমার আকর্ষণের যে বীজ বপন হয়ে সুপ্ত অবস্থায় অপেক্ষায় ছিল পৃথিবীর আলো বাতাসের সান্নিধ্যে আসার। ছোট ছোট ঘটনা, আমার উপস্থিতিতে তোমার চেহারার উজ্জ্বলতা, আমার প্রতি তোমার ছোট ছোট আনুকুল্য, আমার মনের আশার বীজটিকে প্রতি নিয়ত অঙ্কুরোদগমে সাহায্য করে যাচ্ছে। তোমার হৃদয়ের উষ্ণতা, তোমার চেহারার উজ্জ্বল্য, সময়ে অসময়ে তোমার হাতের উষ্ণ পরশ সেই বীজকে আলোর পানে আহ্বান করছে। আমার হৃদয়ের প্রেমের বীজটি দুটি পাতা দুদিকে মেলে আকাশে উড়াল দেয়ার মানসে এমনভাবে উর্ধাকাশে একটু একটু করে এগিয়ে গেছে যে, তাকে রুখার সাধ্য আমার হয় নি। অবশ্য রুখতে চেষ্টাও করিনি কখনো। তুমিই সেই আলো যা আমার প্রেমের অঙ্কুরোদগমে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছো। আবার প্রতিনিয়ত তুমিই তাতে পানি সঞ্চার করে তাকে বেড়ে উঠতে সহায়তা করেছো নিজেরই জ্ঞাতসারে অথবা কখনো বা অজ্ঞাতে। তোমার হৃদয়ের কাছে যেতে যেমন তুমি কখনো বারণ করো নি, তেমনি তোমার সদ্য পল্লবিত দেহের উষ্ণ পরশেও ধন্য করেছো কাজে অকাজে- হয়তোবা তোমার অজান্তেই অথবা কখনো কখনো জ্ঞাতসারেও। কিন্তু আমি যা পেয়েছি তা কিন্তু অজান্তে রয়ে যায় নি আমার। যা পেয়েছি তা নাড়িয়ে গেছে আমার হৃদয়কে, আমার চেতনাকে, আমার অনুভূতিকে। আসন তৈরী করেছে হৃদয়ে তোমার জন্য, কামনা তৈরী হয়েছে রক্তের গভীরে তোমারই জন্য।
No comments:
Post a Comment