Welcome Text

Welcome you to read daily important topics, quotes, discussion or news. You can share your comments or even new topics you like to be seen by the world

টিস

এমন একটি টিস শুনে দুজনেই হতচকিত হয়ে গেলাম। জবাব দেয়ার মতো কোন কথা সহসা মুখে এলো না। কারণ এমন কোন আওয়াজ শুনব তা কল্পনারও অতীত। আর তাই এর জবাবে আরও একবার স্মিত হাসি ছাড়া আর কিছুই এলো না। আঃ কাদের অবশ্য জবাব দিয়েছিল, সন্ধ্যা হয়ে গেছে, বাসায় গিয়ে পড়াশোনা করো, যাও। সে বলতে পেরেছিল, কারণ তার এক ছাত্রীও সেখানে ছিল, যাকে সে আরবী পড়াতো। সেখানের প্রায় সবায় তাকে একজন শিক্ষকের মর্যাদায় দেখতো।
এর কয়দিন পরে, কলেজে দোতালায় ক্লাশ শেষে সিঁড়ি দিয়ে নামতেই নজরে এলো সেই মেয়েটিকে, যে সেদিন টিস করেছিল, করিডোর দিয়ে হেঁটে আসছে বিপরীত দিক থেকে। আমি একটু জোর পায়ে নেমে একেবারে তার সামনে গিয়ে, ‘এক্সকিউজ মিবলে তার তার সামনে দাঁড়িয়ে গেলাম। মেয়েটিও সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেছে দুজনের দৃষ্টি দুজনের দিকে স্থীর। এক্সকিউজ মি বলা পর্যন্তই, তার বেশী আর কিছু আমার মুখ দিয়ে বের
হয় নি। কিজানি কোন এক অমোঘ টানে আমি কোন কিছু না বুঝেই হঠা করে তাকে দেখে দৌঁড়ে গিয়ে তার সামনে দাঁড়ালাম। কিন্তু তারপরে যখন হুস এলো তখন আর আমার মুখে কোন কথা বের হয় নি। কয়েক সেকেন্ড মাত্র মেয়েটি আমার পানে চেয়ে থাকার পরে আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো সামনে, যেদিকে যাচ্ছিল।
বুঝলাম মেয়েটি এই কলেজেই পড়ে। আমার মনে হলো, মেয়েটি আমাকে উপেক্ষা করল। আমার সাথে কথা বললো না। এই সহজ জিনিসটা আমার বুঝে এলো না যে, দৌঁড়ে সামনে যখন আমি গিয়েছি তখন কথাতো আমাকেই শুরু করতে হবে। সেতো আমার কথা শুনবে না বলে নি। কিন্তু আমার দুর্বল চিত্তে ব্যাপারে পজেটিভ চিন্তা করার মতো অবস্থা তখনও তৈরী হয় নি।
আমার মনে হলো, কেনই বা সে আমার সাথে কথা বলবে। অস্বস্তি এলো নিজের মনে। তাকে দেখেই কিভাবে কান্ড জ্ঞান হারিয়ে কথা বলার জন্য এগিয়ে গেলাম। পাগল নাকি! দুষ্টামী করে খেয়ালের বসে টিস (tease) করেছে বলেই আমার সাথে কথা বলবে এমনটি ভাবার জন্য নিজেকে খুব বোকা মনে হলো। কিভাবে যে আমি তার সামনে হুট করে গিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম, ভাবতে গিয়ে নিজেকে ওজনহীন এক মাংশপিন্ড মনে হলো। আমার মনে হলো, আমি না, অন্য কেউ আমাকে নিয়ে গিয়েছিল। নিজে থেকে যাবার দুঃসাহস আমার কোন দিনই হয়নি, আজ কিভাবে হবে? এতটা সাহসীতো আমি কোনদিনই ছিল না।
সামান্য একটু আঁচড় যা লেগেছিল সেদিন বিকেলের অদ্ভূত টিসে তা সহসাই দূর হয়ে গেল মন থেকে। ভাবতে ভাবতে যে কল্পনার ফানুস উড়াচ্ছিলাম  আপন মনে তার সুতা কেটে গেল। ফিরে তাকালাম তার নিজের দিকে, যার অতীত এক বদ্ধ পুকুরের মজে যাওয়া পানির উপরিভাগের মতো। লজ্জা পেল নিজের কাছে। সিদ্ধান্ত নিলাম আর যাবো না রেসিডেন্সিয়াল এরিয়ার বাউন্ডারীর মধ্যে। সেদিনের সেই কথাগুলোকে এক ইনসাল্ট হিসাবে মনে হলো আমার কাছে।
প্রথম যখন একটি শিশু তার মায়ের গর্ভে থেকে এই প্রথিবীর আলো-বাতাসের মাঝে চোখ মিলে তাকায় তখন সে সব কিছুই তার অপরিচিত দেখে। আর হয়তো বা সেই কারণেই হয়রান হয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। এর পর মায়ের মমতা যখন তাকে আদর করে বুকে আগলে নেয় তখন সে পরিচিত হয়ে যায় এর সাথে। বুঝতে পারে অপরিচিতের মাঝেও মমতা আছে। মায়ের মমতা ছাড়া আর কোন কিছুর সাথেই সে পরিচিত হয় না; হতে চাই না। আর তাই মায়ের মমতাভরা বুক থেকে দ্বিতীয় কোন কোলে যেতে চায় না।
কিন্তু না, থেমে থাকে না ওখানেই। আস্তে আস্তে পরিচিতি আসে আরও অনেক কিছুর। ভাল লাগতে শুরু করে আরও অনেক কিছু। আর তখন একটু একটু করে হাসতে শেখে, হাসতে শুরু করে, যা সে জানতো না। দিন দিন তার অবস্থানের গন্ডি বড় হতে থাকে; তাকে আপন করে নেয় পৃথিবীর আরও অনেক কিছু, আবার অনেক কিছু তার সাথে অসহযোগীতাও করে। একে একে পরিচিত হতে থাকে দুটোর সাথেই। কত রকমের বৈচিত্র আসে তার চলার পথে। খাপ খাইয়ে নেয় নিজেকে সবকিছুর সাথে যা সে তার চারপাশে দেখে।
আমার জীবনে চলার পথে কোন বৈচিত্র আজ পর্যন্ত চোখে পড়ে নি। হয়তো বা এই কারণে যে, বৈচিত্রতো নিজে কারো কাছে আসে না; বরং বৈচিত্রের কাছে যেতে হয়। নতুন পরিবেশে নিজেকে যখন নিয়ে যায় তখনই সম্ভাবনা থাকে বৈচিত্রময় কোন কিছুর সাথে দেখা হবার। আর বিচিত্র অভিজ্ঞতা তাকে সাহসী করে, সামনে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা দেয়। জানতে শেখায় কোন কিছু কাংখিত না হলেও তাকে গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নিয়ে আসার আগ্রহ এবং মনোবল।
আমি যে পরিবেশে বড় হয়েছি সেখানে নতুন কোন কিছুর সাথে পরিচিত হবার সুযোগ যেহেতু ছিল না, তাই কোন কিছুকে ভিন্নভাবে দেখতে পেলেও যে নতুন উদ্যমে তাকে নিজের মতো করে নিতে হবে সে মনোবল আমার মধ্যে কোনদিনই আসে নি। শুধু স্কুল এবং বাড়ী এই- ছিল আমার জীবন। আর তাই যখন সোহানা আমার আহ্বানে হাতে হাত রেখে কথা বলার কোন প্রকাশ দেখাল না তখনই হতাশ হয়ে গেলাম। চলে গেলাম নেগেটিভ সিদ্ধান্তে।
কয়দিন যাব রেসিডেন্সিয়াল এরিয়ার মধ্যে যেমন গেলাম না, তেমনি কলেজে গিয়ে যাতে সোহানার সামনাসামনি পড়তে না হয় সেদিকে সতর্ক হবার চেষ্টা করতে লাগলাম। আঃ কাদের বিকেলে রেসিডেন্সিয়াল এরিয়ার মধ্যে যাবার জন্য বললে কৌশলে এড়িয়ে যেতে লাগলাম। অন্য কোন দিকে বেড়াতে যাবার জন্য তাকে রাজি করাতাম। এভাবে আরও প্রায় এক সপ্তাহ পার হয়ে গেল।
একদিন কলেজে গিয়ে বাই সাইকেল গ্যারেজে রেখে বেরিয়ে আসার সময় সোহানার সামনে পড়ে গেলাম। খেয়াল করি নি আগে থেকে যে সোহানাও একই সময়ে রিকসা থেকে নেমে কলেজ বাউন্ডারীর ভিতরে প্রবেশ করেছে। দুজনের দৃষ্টি সামনা সামনি হতেই সোহানা বলল, হ্যালো মিঃ লাফটার (laughter)!
বুঝতে পারলাম না কি মিন করে লাফটার বলল। জিজ্ঞেস করলাম, লাফটার! হোয়াট ইস দ্যাট? আপনি কি আমাকে বলছেন?
- না, আপনাকে না; কানা বগাকে বলছি।
- কানা বগা! কে সে?
- আপনি; আবার কে?
- আমি কানা বগা? কি বলছেন আপনি?
- কানা বগা না বললেতো আপনি বুঝলেন না যে আপনাকে বলছি।
- এই কথা? আমি যদি কানা বগা হই তবে আপনি অবশ্যই কানা বগী হবেন। সাহস করে বলে ফেললাম কথাটা। কারণ গতদিনের তার উপেক্ষার কারণে তার উপরে একটা হাল্কা ক্ষোভ জমা হয়েছিল অলরেডী। আবার এখন কানা বগা বলাতে সেটা হালকা থেকে কিছুটা ভারি হয়ে গিয়েছিল।
- কেন? how dear you are? আমি কানা বগী?
- রেগে যাচ্ছেন কিন্তু আপনি।
- রাগবো না? আপনি আমাকে কানা বগী বলবেন, আর আমি রাগবো না?
- রেগে গেলে আপনারই যে লস সেটা সম্ভবত আপনি বুঝতে পারছেন না। আমার কিন্তু কিছু হবে না।
- আমার লস মানে? আপনি আমাকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করছেন।
- আমি আপনাকে কোন মেইলই করছি না। কিন্তু আপনি আসাম মেইল-এর গতিতে চলছেন। শুনুন। আমি যে আপনাকে কানা বগী বলেছি এটা যদি কোন দুষ্টু মেয়ে বা ছেলে শুনতে পাই তবে তা পুরো কলেজে প্রচার হয়ে যাবে এবং এর পর থেকে আপনাকে কানা বগী হিসাবেই পরিচিত হতে হবে।
- how dea you! আপনি আমাকে কানা বগী কিভাবে বললেন, তার জবাব আগে দেন।
- ঠিক আছে তার জবাবও আমি দিচ্ছি। আমরা এই কলেজে পড়ি। সেই সুবাদে আমি এই কলেজের ছাত্র আর আপনি এই কলেজের ছাত্রী। ঠিক কিনা?
- হ্যাঁ ঠিক; তো?
- অর্থা আমি ছাত্র আর তার ফেমিনাইন জেন্ডার ছাত্রী আপনি। ঠিক একই সূত্র অনুসারে ছাত্র হিসাবে আমি যদি কানা বগা হই তবে তার ফেমিনাইন জেন্ডার বগী ছাত্রী হিসাবে আপনি হবেন; যেহেতু আমরা দুজনেই এই কলেজে পড়ছি।
- you are so critical  বলে সে চলতে উদ্যত হলে আমি বললাম, শুনুন। রাগ করার কোন দরকার নাই। আমিও কানা বগা নই আর আপনিও কানা বগী নন; ওকে? কিন্তু একটা প্রশ্নের জবাব দিন।
- কি সেটা?
- প্রথমে আপনি আমাকে কি বলে যেন ডেকেছিলেন? আমি বুঝতে পারি নি।
- আপনি বুঝবেনও না।
- কেন বুঝবো না? বুঝ শুধু কি আপনারই দখলে? আপনি বলেই দেখেন বুঝি কি না। দেখলেন না কানা বগা বলাতে কত সহজে বুঝে গেলাম?
হেসে দিল সোহানা। বলল, আবার কথা?
- ঠিক আছে আর বলছি না, কিন্তু বলেন কি বলেছিলেন প্রথম।
- হ্যালো মিঃ লাফটার বলেছিলাম।
- লাফটার কেন?
- বলেছিলাম না আপনি বুঝবেন না?
- বলেছিলেনতো, কিন্তু বুঝবো না কেন, যদি আপনি বুঝান।
- বুঝবেন না এই জন্য যে, আপনার লাফিং মানে হাসি কত সুন্দর তাতো আপনার বোঝার কথা নয়; কাজেই লাফটার আপনাকে কেন বললাম তাও আপনি বুঝবেন না।
- , এই কথা? ক্রিটিসাইজ করলেন?
- অবশ্যই না। যা সত্যি তাই বললাম।
- তাই নাকি? তাহলেতো বলতে হবে আপনার বিশ্লেষণ শক্তি বেশ প্রখর? সবকিছুকেই কি আপনি এমনভাবে বিশ্লেষণ করেন নাকি?
- না, যেগুলো করতে ভাল লাগে শুধু সেগুলো।
হাঁটতে হাঁটতে কমন রূমের কাছাকাছি চলে এলো। সোহানা বাই বলে বাম দিকে মেয়েদের কমন রূমের দিকে চলে গেল।
আমার মনে তার কথাগুলো বেশ দাগ কাটল, যেগুলো করতে ভাল লাগে সেগুলো - তার মানে আমার হাসি তার ভাল লাগে! হাসি ভাল লাগে মানে কি আমাকেও ভাল লাগবে।

No comments: