Welcome Text

Welcome you to read daily important topics, quotes, discussion or news. You can share your comments or even new topics you like to be seen by the world

মরার উপর খাড়ার ঘা

টানা দিন পরে কলেজে গেলাম। অর্থা দিন ক্লাশে অনুপস্থিতি। এটা স্কুল না যে এতোটা হিসেব করতে হবে। কলেজে দিন না যাওয়াটা তেমন কোন বড় ব্যাপার নয় আমাদের মতো স্বাধারণ ছাত্রের জন্যবাড়িতে যখন ছিলাম তখনতো এতোটা ফিলিংস আসে নি, কিন্তু কলেজে এসে মনে হতে লাগলো, কত দিন যেন কলেজে আসি নি। চোখ বার বার খুঁজে ফিরতে লাগলো দুটি চোখকে; কিন্তু দেখা পেলাম না কোথাও কেন বাড়িতে থাকা অবস্থায় এতটা ফিলিংস আসে নি? সম্ভবত দুইটা কারণে আসে নি। একটা হলো, বাড়ির পরিবেশে প্রতিক্ষার যন্ত্রণার মধ্যে অত বেশী কাবু করতে পারে নি। দ্বিতীয় হলো, একটা সান্তনা সবসময়ই ছিল যে, এইতো ফিরে যাওয়া মাত্র অপেক্ষা। ফিরে যাওয়ার সাথে
সাথেইতো মিলিত হবো কোন ফারদার অপেক্ষা ছাড়া। কিন্তু আসার পরে তা হলো কই?
ক্লাশে খুব একটা মনযোগী হতে পারলাম না। শুধু মনে হতে লাগলো একটু সময়ের জন্য হলেও দেখা হওয়া দরকার, দেখা করা দরকার। এক অভিনব অনুভূতি যা আমাকে কোনদিন ঘায়েল করে নি আগে। যার সাথে পরিচিতি আমার আগে কখনো হয় নি।
ক্লাশ অফ দিয়ে যে খুঁজতে যাবো তারও কোন যুক্তিকতা নাই। খুঁজবো কোথায়? তার ক্লাশে যেয়ে যেমন খুঁজতে পারবো না, তেমন পারবো না মেয়েদের কমন রূমে যেয়ে। খুব বেশী হলে কমন রূমের সামনে দিয়ে হেঁটে আসতে পারি অথবা পারি তার ক্লাশ রূমের সামনে দিয়ে হেঁটে আসতে। কিন্তু তাতে কি এমন হবে? আমাকে কি সে দেখতে পাবে? যদি দেখতে পায়ও তবুও কি সে আমাকে দেখে ক্লাশ থেকে বের হয়ে আসবে আমার সাথে কথা বলতে? ক্লাশের অথবা কমন রূমের বাইরে শুধুমাত্র দেখা হতে পারে তার সাথে। কমন রূমে যদি সে থাকেও তবুও সেখানে গিয়ে তাকে খোঁজ করে ডেকে নিয়ে কথা বলার মতো অত বড় বুকের পাটা আমার নাই। অতগুলো মেয়ের সামনে নিজেকে দেখেইতো আমার সমস্ত শক্তি লোপ পেয়ে যাবে কোন কিছু বলার বা করার আগে। তাছাড়া তার সাথে আমার সম্পর্ক এতটা গাঢ় পর্যায়ে এখনো পৌঁছায় নি যে ক্লাশে বা কমন রূমে গিয়ে তাকে ডাকতে পারি। গায়ের জোরে যদি ডাকতে যাইও তাতে যে সে রাগ হবে না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না; কারণ সেদিন তার বান্ধবীদের সামনের ঘটনাকে সে ভাল দৃষ্টিতে নেয় নি।
এভাবে নানান অসংলগ্ন চিন্তায় একটার পর একটা ক্লাশ শেষ হতে লাগল। পঞ্চম পিরিয়ডের পরে টিফিন টাইমে অতি দ্রুত বের হলাম ক্লাশ থেকে। ছেলেদের কমন রূমের সামনে যেতেই দেখলাম সোহানাদের ক্লাশের মেয়েরা ক্লাশ শেষ করে তাদের কমন রূমের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু সেখানে দেখা পেলাম না সোহানার। অবাক হলাম। চিন্তা করলাম হয়তো আসছে পিছনে কোন বান্ধবীর সাথে গল্প করতে করতে। আমি দাঁড়িয়েই রইলাম। না, কোন দেখা নাই। বুঝতে পারলাম না কি করবো। এক পা দুপা করে কমন রূমের দিকে হাঁটতে লাগলাম। শেষে পৌঁছে গেলাম মেয়েদের কমন রূমের সামনে। দরজা দিয়ে দৃষ্টি দিলাম ভিতরের দিকে। চোখে পড়ল না সোহানাকে। ফিরে আসার জন্য পা ফেললামপিছন থেকে কেউ যেন ডাক দিল। ফিরে তাকালাম। নাবিলা!
দাঁড়িয়ে গেলাম। নাবিলা এগিয়ে এলো। সামনে এসেই প্রশ্ন করলো- কোথায় ছিলেন আপনি এতদিন? তার প্রশ্ন শোনার মতো ধৈর্য আমার নাই। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সোহানা কোথায়?
-          আছে; আপনি কোথায় ছিলেন এতদিন?
-          কোথায় আছে? কলেজে এসেছে, নাকি আসেনি?
নাবিলা হেসে দিল। বলল, আপনারা দুজনই পাগল। সে খোঁজে আপনাকে, আপনি খোঁজেন তাকে; কেউ কারো দেখা পান না।
-          সে কোথায় খোঁজে আমাকে?
-          কলেজে। তিনদিন যাবত খুঁজে খুঁজে আপনার কোন পাত্তা নাই। আজ আবার আপনি এসেছেন তাকে খুঁজতে। আপনি ছিলেন কোথায় কয়দিন তা বলেনতো আগে।
-          আমি বাড়ি গিয়েছিলাম।
-          বাড়ি গিয়েছিলেনতো বলে যাবেন না?
-          স্যারি, ভুল হয়ে গেছে। সোহানা কোথায় তাই বলুন। কলেজে আসে নি আজ?
-          না।
-          কেন? অসুস্থ?
-          না।
-          তাহলে কলেজে আসে নি কেন?
-          বাড়ি গেছে।
-          বাড়ি গেছে মানে!
-          বাড়ি গেছে মানে, বাড়ি গেছে। যেতে পারে না? আপনি বাড়ি যেতে পারেন, সে পারে না?
তার কথার কোন জবাব আমার মুখে এলো না। বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম নাবিলার দিকে। নাবিলা বলল, কি দেখছেন অমন করে?
-          আপনি সত্যি বলছেন?
-          আশ্চর্য্য! মিথ্যা বলতে যাবো কেন?
-          করে আসবে?
-          এক শপ্তাহ পরে।
-          কবে গেছে?
-          আজ সকালের গাড়িতে।
-          বাড়ি কোথায় ওদের?
নাবিলা শব্দ করে হেসে দিল। হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলো, কেন, আপনি যাবেন নাকি ওর বাড়ি?
ওর হাসি এবং কথায় আমারও হাসি এসে গেল। বললাম, দূর! আপনি রসিকতা করছেন। আপনি জানেন আমি সেটা মিন করি নি।
-          ঠিক বলেছেন, আমি রসিকতা করছি। কিন্তু যেতেওতো পারেন।
-          আমাকে খুঁজছিল না কি যেন বললে?
-          হ্যাঁ। বলা নাই কওয়া নাই, আপনি লাপাত্তা। তার উপরে তাকে আজ কুষ্টিয়া ছাড়তে হচ্ছে প্রায় এক সপ্তাহের জন্য। সম্ভবত সেই জন্য আপনার সাথে মিলতে চাচ্ছিল। পেরেশান দেখাচ্ছিল বেশ।
-          আজকেই তার বাড়ি যেতে হলো!
-          তার কোন এক রিলেটিভের বিয়ে, তাই।
-          বিয়ে করার আর সময় পেল না? হাসতে হাসতে বললাম। নাবিলাও আমার সাথে হাসতে হাসতে বলল, আহা! বেচারা।
আমি আর কোন কথা বললাম না। ধন্যবাদ দিয়ে চলে এলাম।
টিফিন আওয়ার তখনো শেষ হয় নি। ক্লাশ রূমে গিয়ে বসলাম, কিন্তু ভাল লাগলো না। এতোটা খারাপ লাগার মতো কিছুই হয়নি জানি। এও জানি যে, যার সাথে দেখা না হবার কারণে মনের এই অবস্থা তার সাথে এমন কোন উল্লেখযোগ্য সম্পর্কও তৈরী হয় নি বা হবে যে তারও কোন নিশ্চয়তা নাই। কিন্তু যুক্তিতে মনে কোন প্রভাব পড়ছে না। যার প্রভাবে মনের উপরে এক ভাল না লাগার অনুভতি ভর করেছে যুক্তি দিয়ে তাকে তাড়ানো যাচ্ছে না। আমার কাছে মনে হলো না এর নিয়ন্ত্রণ আমার হাতে রয়েছে। তবে বার বার আমার এটাও মনে হতে লাগলো যে, এটা নিছক পাগলামী তো নয়!
আজ আর ক্লাশ করা সম্ভব নয়; খাতাটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম লজিং বাড়ির উদ্দেশ্যে। কিন্তু লজিং বাড়ি না গিয়ে চলে গেলাম আঃ কাদেরের খোঁজে তার লজিং বাড়ি। বাড়ি থেকে এসে তার সাথে দেখা হয় নি। আমাকে দেখে অত্যান্ত ফ্থল্লতার সাথে ওয়েলকাম করলো। এটা তার স্বভাবসিদ্ধ- আমার খুব ভাল লাগে তার আতিথেয়তা।
সে মাদ্রাসা থেকে এসে খাওয়া-দাওয়া করে শুয়ে শুয়ে তার বাড়ী থেকে সদ্য আসা চিঠি পড়ছিল। আমি যাওয়ায় চিঠিটা খামের ভিতর ভরে রেখে দিল। আমি বললাম, আপনি শেষ করেন আপনার চিঠি পড়া; কোন সমস্যা নাই। সে বলল, আমি শেষ করেছি অনেক আগেই। সামনে ধরে চিন্তা করছিলাম।
-          সব খবর ভালতো?
-          খবর ভাল। কিন্তু ভালোর মাঝেও সমস্যা রয়ে গেছে।
-          কি হয়েছে?
-          বাপজান চিঠি লিখেছেন, আমার জন্য মেয়ে দেখেছেন। যত তাড়াতাড়ি পারি যেন বাড়ি যাই।
-          সেতো সুখের খবর।
-          শুনতেই শুধু সুখের।
-          মানে?
-          আমার এখন ইনকাম কি আছে যে বিয়ে করবো? বিয়ে করলেই কি হয়ে গেল?
-          ইনকামের পথ নিশ্চয় আপনার আব্বা কিছু চিন্তা করে রেখেছেন।
-          কিছুই না। শুধু বিয়ের পথই চিন্তা করে রেখেছেন। ছাড়ুন ওসব; আপনার খবর কি বলুন।
-          আমার আর কি খবর বলবো? কাল আসলাম বাড়ি থেকে। সকালে কলেজে গেলাম। ক্লাশ করতে ভাল লাগল না চলে আসলাম।
-          ভাল লাগল না কেন?
-          এমনিই।
-          এমনি হলেতো ভালইআফতাব সাহেবের মেয়ে কাল আপনার কথা জিজ্ঞেস করছিল।
-          আফতাব সাহেব কে?
-          পানি সেচ প্রকল্পের অফিসার। তার বড় মেয়ে আপনাদের কলেজে পড়ে।
-          আমার কথা কি জিজ্ঞেস করছিল?
-          আপনি কোথায়।
-          তাই নাকি? ইন্টারেস্টিং!
-          জ্বি, ইন্টারেস্টিংই বটে। কিন্তু ব্যাপারটা কি বলুনতো।
-          ব্যাপারটা কি তার আমি কি জানি? আমি কোথায় তা সে জিজ্ঞেসইবা করবে কেন? আমার সাথে তার কি দরকার? আমি এক সুবোধ বালকের মতো বললাম।
-          কি দরকার তা সে আর আপনি জানেন?
-          দূর! আপনি দুষ্টামী করছেন।
-          দুষ্টামী করবো কেন? গতকাল বিকালে আমি আর আনোয়ার রেসিডেন্স-এর ভিতরে ঘুরতে গিয়েছিলাম। আজানের একটু আগে ফিরে আসছি এমন সময় কয়েকজনের সাথে সাইড থেকে জিজ্ঞেস করলো, আপনাদের আরেকজন সাথীকে দেখছি না আজ?
-          এই কথা? এটা কি আমাকে খোঁজ করা হলো? আপনাদের সাথে কোন একটা অজুহাতে কথা বলতে চেয়েছে মাত্র। নিজেদেরটা আমার ঘাড়ে চাপাচ্ছেন কেন?
কথাগুলো বললাম ঠিকই; কিন্তু মনটা আমার দুরূ দুরূ করছে। আর কি কথা বলেছে তা শোনার জন্যও মনটা অধির হলো।
-           আপনার ঘাড়ে নয়, আপনার হৃদয়ের ব্যাপার মনে হলো।
-          আপনি শুধু শুধু আমাকে টানছেন।
-          শুধু শুধু যে টানছি না তারও প্রমাণ আমার কাছে আছে।
-          কি সেটা?
-          তার প্রশ্নের জবাবে আনোয়ার যখন বলল, বাড়ি গেছে তখন সে আবার জিজ্ঞেস করলো, কবে ফিরবে।
আমার কাছে মনে হলো, আমি ধরা পড়ে গেছি। কিন্তু তারপরেও ধরা না দেয়ার প্রচেষ্টা হিসাবে আমি বললাম, আঃ কাদের ভাই! আমাকে অন্ধকারে রেখে কি সব বলছেন, আমার বুঝে আসছে না। আমার কথা কেন জিজ্ঞেস করতে যাবে সে আপনাদেরকে?
-          আমারও প্রশ্ন সেটাই।
-          মানে?
-          আপনার কথা কেন আমাদেরকে জিজ্ঞেস করবে- সেটা। তারতো আপনারই কাছ থেকে জানা থাকার কথা আপনি কোথায় এবং কবে ফিরবেন।
এমন সময় আনোয়ার প্রবেশ করলো রূমে। রূমে প্রবেশ করে সালাম দিয়েই বলে উঠলো- আঃ কাদের ভাই! মিষ্টি-টিষ্টির বন্দোবস্ত হয়েছে, নাকি বাকী আছে?
-          তোমার অপেক্ষায় আছে। আঃ কাদের বলল।
-          আমিতো রেডি। সাইকেলও বাইরেই আছে। চলেন বের হই। আনোয়ার বললো।
-          উনি ধরাই দিচ্ছেন না তো বের হবেন কেমনে?
-          ধরাতো পড়েই গেছে। আবার নতুন করে ধরা কি দেবে? এখন শুধু মিষ্ট খাওয়ানোর পালা। আমাকে লক্ষ্য করে বলল, এখন যাবেন নাকি বিকালে?
-          ঘটনাইতো আমি বুঝলাম না- আপনারা দুজনে মিলে কি বলছেন। হঠা করে আপনারা দুজন আমার প্রতি এতো বেশী সদয় কিভাবে হয়ে উঠলেন বলেনতো? আমি বললাম।
-          তার মানে আমরা কি আপনার প্রতি নির্দয় ছিলাম নাকি? আঃ কাদের বলল।
-          অবশ্যই না। কিন্তু এখন খুব বেশী সদয় মনে হচ্ছে।
আনোয়ার বলল, থাক ওসব কথা। এখন সত্যি করে বলেনতো আসল ঘটনা কি। দুনিয়ায় এতসব মানুষ থাকতে আপনার কথা কেন জিজ্ঞেস করে হঠা করে? কিছুতো একটা ব্যাপার অবশ্যই আছে- আপনি যতই অস্বীকার করেন।
এই প্রশ্নটাতো তাকে করা উচিত ছিল আপনাদের। তাহলে না সঠিক জবাব পাবার আশা ছিল। আমার ইনভল্বমেন্ট ছাড়াই যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন তবে কিভাবে সঠিক জবাব পাবেন? আমার এই কথার জবাবে আনোয়ার বলল, ঠিক আছে, আমাদের চোখ-কানও বন্ধ আছে বা থাকবে মনে করবেন না। কয়দিন লুকিয়ে রাখবেন সেটাও আমরা দেখবো। তখন কিন্তু মিষ্টির পরিমাণ ডবল হয়ে যাবে- মনে থাকে যেন। তাছাড়া এখন আমাদেরকে আপনি নিজে থেকে বললে কোন সহযোগীতার দরকার হলে আমাদের কাছ থেকে পেতে কোন অনুসবিধা হতো না। কিন্তু পরে আমরা জানতে পারলে সেক্ষেত্রে কোন রকম সহযোগিতার আশা কিন্তু আপনি আমাদের কাছে করতে পারবেন না।
আমি এই ব্যাপারে বলছি না, যে কোন সময় যে কোন ব্যাপারে আপনাদের কাছে সব রকমের সহযোগিতা আমি আশা করতে পরি এবং আমার বিশ্বাষ, আপনারা তা করার জন্য সম্ভাব্য চেষ্টায় কোন রকম ত্রুটি করবেন না। আমি হাসতে হাসতে বললাম। আমার কথা শুনে অন্যেরাও হেসে বলল, অবশ্যই কিন্তু আসল ব্যাপার আমাদেরকে লুকিয়ে আপনি কিন্তু ভাল করছেন না। এতটুকু যখন বের হয়েছে তখন বাকীটাও বের হবে, চিন্তা করবেন না। কিন্তু দুঃখ রয়ে যাবে যে, নিজেদের ব্যাপার বাইরের কারো কাছ থেকে শুনতে হলো।

No comments: